ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিতে প্রবেশের বয়স

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৮ আগস্ট ২০১৮

চাকরিতে প্রবেশের বয়স

চাকরি, বিশেষ করে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। কেননা ইতোমধ্যে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, প্রায় ৭১ বছর ৬ মাস। বেড়েছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। সেই অনুপাতে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ছে না। অন্যদিকে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগসহ কর্মসংস্থান বাড়লেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় অগণিত পদ খালি রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি চাকরির বয়স ‘এন্ট্রি লেবেলে’ বর্তমানের ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ এবং অবসরের বয়স ৬০-এর পরিবর্তে ৬৫ করার প্রস্তাব দিয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিচারপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স অনরূপ। এ প্রস্তাব পুরোপুরি রক্ষিত না হলেও বিস্তারিত পর্যালোচনার পরে উভয় দিকে দুই বছর করে বাড়ানো হতে পারে। তবে অবসরের বয়স বাড়াতে হলে ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী আইন সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি জারিরও সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। বাস্তবে বেশি বৈ কম নয়। জাতীয় সংসদে পরিবেশিত এক তথ্যে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন পদে শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি। অথচ দেশে উচ্চশিক্ষিত তথা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার। মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই তরুণ ও কর্মক্ষমÑ বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। এতে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ বাংলাদেশে গড়ে তুলতে হবে। পরিকল্পিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। বর্তমানে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বৈচিত্র্য ও বহুমুখিতা কম। সেক্ষেত্রে ধান-চালের পাশাপাশি কৃষির বহুমুখীকরণ তথা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। ভারি ও বহুমুখী শিল্পায়ন করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংক-বীমাসহ কারিগরি উৎকর্ষ অর্জনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, মহাকাশ গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে দেশেই। একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি বর্তমান সময়ের দাবি। পরিহার করতে হবে ধর্মীয় কূপম-ূকতা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সে অবস্থায় চাকরিতে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক হবে নিঃসন্দেহে।
×