ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী কঠোরতা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আইনী কঠোরতা

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় দুই বাসের পাল্লাপাল্লি ছোটার দৃশ্য অবলোকনের অসহায় অভিজ্ঞতা রয়েছে যাত্রীদের। প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে ওই প্রতিযোগিতা রুদ্ধশ্বাস হয়ে দেখেন যাত্রীরা উপয়ান্তর না দেখে। অনেক সময় প্রতিবাদও করেন। কিন্তু বাসচালক আর হেলপারদের তাতে কিছুই এসে যায় না। এতে যে তাদের নিজেদেরও জীবন বিপন্ন হতে পারে সেই দুর্ভাবনাও যেন নেই। ফলে ঢাকার নৈরাজ্যকর নগর গণপরিবহন অব্যবস্থাপনায় সামান্যতম চিড় ধরছে না। জিম্মি হয়ে থাকে সাধারণ যাত্রী। কয়েক দিন আগে দুই বাসের চালকের পরস্পরকে টেক্কা দেয়ার ঘটনায় পিতামাতাহীন কলেজছাত্র একুশ বছরের তরুণ রাজীবকে তার ডান হাত হারাতে হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি এখন প্রতিদিনের দুঃসংবাদ। দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৫ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু ঘটছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যাচ্ছেন ৩ হাজার ১৬৭ জন। এটা সত্য যে, কোন গাড়ি মৃত্যুদূত হিসেবে সক্রিয়তার নজির রাখলে দোষী করা হয় সংশ্লিষ্ট গাড়িচালককে। এখানে যুক্তি হলো গাড়িচালকের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। অনেক সময় মাদকসেবনের পর গাড়ি চালনারও অভিযোগ ওঠে চালকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা তো অবশ্যই রয়েছে। যেহেতু একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের প্রাণ হরণের মতো কাণ্ডের জন্ম দিতে পারে তাই গাড়ি এবং গাড়িচালকের সুস্থতার গ্যারান্টি খুব জরুরী। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে প্রশাসনের ওপর অনেক সময় অন্যায্য চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আদালত অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করলে ধর্মঘট আহ্বানের মাধ্যমে অরাজকতাও সৃষ্টি করা হয়। রাজীবের হাত হারানোর ঘটনায় হাইকোর্ট কালবিলম্ব না করে রুল জারি করেছে। যে দুটি বাস প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল সে দুটি বাসের মালিককে রাজীবের চিকিৎসা ব্যয় প্রদানের নির্দেশ দানের পাশাপাশি রুল জারি করা হয়েছে। ওই রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে রাজীবকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। রুলে আরও যা আছে তা সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য যথোপযুক্ত। রুলে যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনারসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করব আদালতের রুলের জবাব যথাসময়ে প্রদান করা হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কার্যকর আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনমনে স্বস্তি আনার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা আগেও বলেছি, সড়ক দুর্ঘটনা আসলে নিছকই দুর্ঘটনা নয়। এগুলো ইচ্ছাকৃত হত্যা বা হত্যাচেষ্টা। এরকম অনেক দুর্ঘটনাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছা। পরিবহন সেক্টরকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারকে হতে হবে কঠোর। সঠিক ট্রাফিক আইন করা এবং আইন না মানলে তাৎক্ষণিক জরিমানার ব্যবস্থা করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। চালকদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেয়াও জরুরী। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা শুধু ঢাকায়ই নয়, সারাদেশে একটি সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা দেখতে চাই। আর এজন্যে আইনী কঠোরতার কোন বিকল্প নেই।
×