ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যালো সোফিয়া...

প্রকাশিত: ০২:১৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

হ্যালো সোফিয়া...

তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রযুক্তিই সম্ভবত একমাত্র সেক্টর, যা দিয়ে এ দেশের তারুণ্য পাশ্চাত্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারছে। আগামীর বিশ্ব যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর তাই বাংলাদেশে এ সেক্টরের সাফল্য মানে এ দেশের সার্বিক উন্নতি সাধন। প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দশক আগেও যেখানে টেলিফোনে কথা বলার জন্য বুকিং দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হতো। কখন লাইন সংযোগ হবে সেটিও ছিল প্রায় অনিশ্চিত আর এখন মোবাইল-ইন্টারনেটে শুধু বাংলাদেশে নয়, দুনিয়ার যে কোন প্রান্তে সব সময় কথা বলা যাচ্ছে। এমনকি যার সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাকে দেখাও যাচ্ছে। তিন দশক আগে যেখানে একটি পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসিতে তথ্য ধারণের ক্ষমতা ছিল কয়েক মেগাবাইট, এখন সেখানে ছোট ল্যাপটপেও তথ্য ধারণক্ষমতার হিসাব গিগাবাইট ছাড়িয়ে টেরাবাইটে চলে যাচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা এগোতে না পারবে, তারা ক্রমেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে, গত ৮-৯ বছরে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বলা চলে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সেই ধারাবাহিকতায় আইসিটি সেক্টরের মেগা ইভেন্ট ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তির আগামী দিনের ইতিহাসে ইভেন্টটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলা যায়। এই ইভেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি দিক ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ও যন্ত্রমানবী সোফিয়ার উপস্থিতি। সোফিয়াকে একনজর দেখতে সেখানে ভিড় করেছিলেন কয়েক হাজার দর্শক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই নারী বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সোফিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে কথাও বলেছে। প্রধানমন্ত্রীও এই প্রসঙ্গে যুগোপযোগী একটি বক্তব্য দেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্মই আইসিটি তথা তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ সেক্টরটিকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড় করাবে। তিনি তরুণ সমাজকে একটি চমৎকার বাংলাদেশ গড়তে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, দেশজুড়ে ২৮টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক গড়ে তোলার কাজ চলছে। এসব পার্কে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য ১০ বছরের আয়কর মওকুফ ও শতভাগ রিপ্যাট্রিয়েশনসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোফিয়ার উদ্ভাবক ড. ডেভিড হ্যানসন প্রযুক্তির প্রতি বাংলাদেশের আগ্রহ দেখে অভিভূত হয়েছেন। ভবিষ্যতে সোফিয়ার নির্মাতা হ্যানসন রোবটিক্সের পক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য সুখবর। তবে এখনও দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রযুক্তির সুবিধাবঞ্চিত। বিশেষত গ্রামীণ জনপদের। শুধু তাই নয়, সিনিয়র সিটিজেনদের একটা অংশ এখনও প্রযুক্তির আওতায় আসতে পারেননি। এই ঘাটতি পূরণ করা জরুরী। এ জন্য অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে অগ্রগতির যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা আরও এগিয়ে নিতে হবে। আশার কথা হচ্ছে সাবমেরিন কেবল ডবল হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। নানা উপায়ে নেটওয়ার্কিং আরও উন্নত করতে হবে। ইন্টারনেটের ব্যয় কমাতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। এটা করা গেলে, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বাংলাদেশ আরও নিবিড়ভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে একীভূত হতে পারবে। এক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ বড় প্রেরণা হয়ে থাকবে।
×