ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে একতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৯ এপ্রিল ২০১৭

জঙ্গী দমনে একতা

ইসলামের নামে চলা জঙ্গীবাদীদের তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠছে সারা দুনিয়ায়। এখন মানুষ অনেক বেশি সচেতন। ইসলামের দোহাই দিয়ে কিংবা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে সহিংস আক্রমণ যে শতভাগ সন্ত্রাস : এর সঙ্গে ধর্মের বিন্দুমাত্র সম্বন্ধ নেই, সেটা এখন অনেকেই অনুধাবন করতে পারছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন থেকেও জঙ্গীবাদ দমনে এক হওয়ার তাগিদ উঠেছে। সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদে নববীর খতিব ও ইমাম এবং মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষের ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মহাসম্মেলনে আসা লাখ লাখ মুসল্লির কণ্ঠে ছিল জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ার অঙ্গীকার। জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছেন বিশ্বের মুসলিম নেতারা। তারা বলেছেন, যিনি দেশ চালাচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার হাতকে মজবুত করা ইসলামের নির্দেশ। উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝি ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে চলা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশে প্রথমবারের মতো লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া প্রকাশিত হয়। জঙ্গীবাদীদের মনোবৈকল্য দূর করা এ ফতোয়া প্রকাশের উদ্দেশ্য। সন্ত্রাস ও জিহাদ যে এক জিনিস নয় এবং জঙ্গীরা ‘শহীদী মৃত্যু’ বলে যা প্রচার করছে সেটাও ঠিক নয়; তা পবিত্র কোরান-হাদিসের আলোকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয় ফতোয়ায়। জঙ্গীবাদবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে আলেমদের এই ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই ফতোয়া প্রস্তুত ও লাখো আলেমের সম্পৃক্তির বিশাল কর্মতৎপরতায় সঙ্গত কারণেই বড় বাধাটি এসেছে জামায়াত-শিবিরের কাছ থেকে। বলা বাহুল্য, কোন তত্ত্ব বা দর্শন সম্পর্কে সহমত পোষণ না করতে পারলে ভিন্নমত প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার আরেকটি তত্ত্ব বা দর্শনের। কলমের বিপক্ষে দাঁড়াবে আরেকটি কলম, চাপাতি বা ছুরি নয়। ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে যেসব অধর্ম করে বেড়ায় ধর্মের যুক্তিপূর্ণ সঠিক ব্যাখ্যাই হতে পারে তার যোগ্য জবাব। একলাখ মুফতি, আলেম-ওলামার স্বাক্ষর সংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়ায় ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও আত্মঘাতী হামলাকে সুস্পষ্টভাবে হারাম বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এটা এখন পরিষ্কার যে, আলেমদের ফতোয়া আমলে নেয়নি জঙ্গীরা। চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। ফলে তাদের নির্মূলে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। সেই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক দোসরদের অপরাজনীতি বন্ধ করাও সমীচীন বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। আমরা দেখেছি এ দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে অতীতে। জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ সে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তৎপর ছিল হিজবুত তাহরীরসহ নানা নামের ইসলামী দল। দেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, উদীচীর অনুষ্ঠানে, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এমনকি হযরত শাহজালালের মাজারে, বিচারালয়ে ও শিক্ষাঙ্গনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ভয়ঙ্কর জঙ্গী কর্মকা- জনগণকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। বিগত দেড়-দুই বছর দেশে জঙ্গীদের এমন কিছু তৎপরতার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে যা জানিয়ে দিয়েছে জঙ্গীরা তাদের কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে মানবতাবিনাশী কর্মকা- অব্যাহত রাখছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একটি জোরালো পদক্ষেপ। আশা করা যায় পবিত্র মক্কা ও মসজিদে নববীর দুই খতিবের জঙ্গীবাদবিরোধী বক্তব্য সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ওলামা-মাশায়েখরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন।
×