ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ১৪ মার্চ ২০১৭

ঢাকার দিনরাত

ফাল্গুন মাসে ঢাকায় বৃষ্টি হবে এমন কোন কথা নেই। কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি সাধারণত চৈত্র মাসেই হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তন অনেক কিছুই ওলট-পালট করে দিচ্ছে। তাই ফাল্গুনেও অকাল কালবৈশাখী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে গত সপ্তাহে আমরা ঢাকায় যে বৃষ্টি দেখলাম তা সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফল। শুধু ঢকায় নয়, দেশের অনেক এলাকাতে পর-পর দু’দিন ভারি বৃষ্টপাত হয়েছে। ঢাকার বৃষ্টি বরাবরই বিড়ম্বনাময়। উপভোগ্য একটা বিষয় কালেকালে হয়ে উঠেছে বিড়ম্বনাময়। এর জন্য আমাদের অপরিণামদর্শিতাকেই দুষতে হবে। অমরা পরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে তুলিনি। বরং যথেচ্ছাচার করেছি শহরকে ছড়িয়ে দিয়ে, খালি জমি, জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চলকে দস্যুর মতো গ্রাস করে আকাশছোঁয়া সব ফ্ল্যাটবাড়ি বানিয়ে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও সুষ্ঠু ও উন্নত নয় বলেই অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে ঢাকা। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা ভোগান্তিময় হয়ে উঠছে। ফাল্গুনী বৃষ্টি তাই নগরবাসী উপভোগ করতে পারেনি। এই বৃষ্টিতেও নাকাল হয়েছে ঢাকা। রাস্তাঘাট, অলিগলি পানিতে সয়লাব, অনেক নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে পানি জমে যায়। এক-দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকার অবস্থা করুণ হয়ে উঠবে, পুরো এক বেলা কিংবা একটি আস্ত দিন পানি জমে থাকবে- এটা কি একটি দেশের রাজধানীর নিয়তি হতে পারে! রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে কম সভাসেমিনার হয় না, কাগজেও প্রচুর লেখালেখি হয়। তবু এর স্থায়ী সমাধানে কোন বাস্তবসম্মত কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অথচ জলাবদ্ধতা দূর করার নামে নাকি বহু কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে গত কয়েক বছরে। জলাবদ্ধতাসহ নানা কারণে রাস্তাগুলোয় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দু’জন নির্বাচিত মেয়র পাওয়া গেছে। অনেকটা সময় তো গেল, এবার উভয়ে কোমর বেঁধে নামুন। রাজধানীবাসীকে একটু স্বস্তি দিন। পাট দিবসের আয়োজন ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ এই সেøাগানে প্রথমবারের মতো সারাদেশে গত সপ্তাহে জাতীয় পাট দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচী নেওয়া হয়। ৯ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও বহুমুখী পাট পণ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলায় ১৩৫ রকমের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাপক প্রচারণার লক্ষ্যে জাতীয় পাট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাট শিল্পের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে বর্তমান সরকার দেশের অভ্যন্তরে ৬টি পণ্য যথা ধান, গম, চাল, ভুট্টা, চিনি এবং সার মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। খুব তাড়াতাড়ি আরও ১২টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। পাট দিবস ও পাটমেলাকে ঘিরে রাজধানীতে বিজয় সরণীর মোড় থেকে ফার্মগেটে মেলাস্থল পর্যন্ত কিছু সাজসজ্জার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে আকর্ষণীয় বাণীসমৃদ্ধ আলোকচিত্রের সমন্বয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বিলবোর্ড। দিবসটি উপলক্ষে হাতিরঝিলে নৌ-শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে পাটের তৈরি ক্যানভাসে চিত্রাঙ্কনেরও আয়োজন করা হয়। ‘চিত্রাঙ্কনে ক্যানভাস’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে পাটের ক্যানভাসে রঙ-তুলির আঁচড় দিতে যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিখ্যাত নবীন-প্রবীণ চিত্রশিল্পীরা। দেশের প্রথিতযশা চিত্রশিল্পীরা রঙ-তুলি দিয়ে সোনালি আঁশের ২০০ ফুট ক্যানভাসে অঙ্কন করেন। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলার পাটÑ এ ধরনের একটা বক্তব্য নজরে পড়ল বিজয় সরণির পশ্চিম-উত্তর পাশে। সেখানে পাটপণ্য দিয়ে কুটিরের আদল তৈরি করা হয়েছে। অদূরেই পাটকাঠির স্তূপ। এসব দেখে অনেক নগরবাসীরই মন ছুটে যায় গ্রামে, শৈশবের দিনগুলোতে। অল্প কিছুকাল ছিলাম খুলনার পল্লীতে, নানাবাড়িতে। করাচী ও ঢাকা নগরীতে বসবাসকারী এক বালকের চোখে ওই পল্লীর (চুকনগর, ডুমুরিয়া থানার অন্তর্গত) যে ছবি এখনও চোখে ভাসে সেটি হলো যতদূর দৃষ্টি যায় জেগে থাকা পাটের ক্ষেত। বর্ষাকালে সেই পাটক্ষেতের কী অপরূপ রূপ। তবে সেখানেই জলকাদার ভেতর প্রথম সাক্ষাত পাই রক্তশোষণকারী এক জীবের। হ্যাঁ, জোঁকের কথা বলছি। খালেবিলে পাট পচানো হতো। সেই গন্ধটি অনেক সময় অসহনীয় হয়ে উঠত। পাটকাঠির রকমারি ব্যবহার মনে পড়ে। খেজুর গাছে ঝুলন্ত রসের হাঁড়ির ভেতর পাটকাঠি চুবিয়ে দিয়ে রস পান ছিল সত্যিই অনিন্দ্য সুখের। তখন তো আর বিদ্যুত ছিল না। অনেক সময় দীর্ঘ পাটকাঠির ডগায় আগুন ধরিয়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাওয়ার কাজটুকু দিব্যি চালানো যেত ঘুটঘুটে অন্ধকারে। পাটের সুদিন ফিরুক, এটা চাইতে গিয়ে রাজধানীর পাট দিবস উদযাপনের অনুষঙ্গে নগরবাসী ক্ষণিকের জন্য হলেও চোখ বুজে স্বর্ণকেশীর মতো পাটের সোনালী আঁশকে একঝলক দেখে উঠতে পেরেছেন। লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির মন্দ সময় ঢাকার গণপরিবহনে নিয়মের বালাই নেই। ঢাকায় বাস-মিনিবাসে শুধু নেই আর নেই। বাইরে সারা গায়ে দগদগে ক্ষত। ভেতরে বাড়তি আসনের কারণে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট। তার ওপর গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। চলাচলের উপযুক্ততার (ফিটনেস) সনদ, বীমা, চালকের লাইসেন্সসহ নেই কিছুই। গণপরিবহনের এই দশা বেরিয়ে এসেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাম্প্রতিক অভিযানে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। বিআরটিএর এই চলমান অভিযানের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর সহায়তায় ৫ মার্চ থেকে আদালত পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই অভিযান ২০ কর্মদিবস চলার কথা। এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনও আদালত পরিচালনা করেছে। নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে এসব আদালতে সহায়তা দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দেখা গেছে, এসব আদালতের সামনে যেসব বাস-মিনিবাস থামানো হয়, এর ৯০ শতাংশই মোটরযান আইনের কোনো না কোনো ধারা ভেঙে চলেছে। অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই। রংচটা বাস-মিনিবাসের বেশির ভাগেরই নেই ফিটনেস সনদ। চলাচলের অনুমতিপত্র, বিমার দলিল, আয়করের কাগজ পাওয়া যায়নি অনেক বাসে। নির্ধারিত আসনের চেয়ে ১০টি পর্যন্ত বাড়তি আসন বসানো হয়েছে। জানালা ভাঙা, শরীরের অসংখ্য জায়গা তুবড়ে গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক চালক পুলিশের সংকেত না মেনে গাড়ি নিয়ে পালিয়েছেন। মোটরযান আইনে বাসের চালকের কাছে নিবন্ধন, ফিটনেস, বিমাসহ ছয় ধরনের দলিল থাকা বাধ্যতামূলক। বিআরটিএর হিসাবে, ঢাকায় প্রায় ছয় হাজার বাস-মিনিবাস চলে। আর জাইকার প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে সোয়া দুই কোটি মানুষের যাতায়াত হয় বাসে। যান্ত্রিক যানের মধ্যে বাস- মিনিবাসের ব্যবহারকারীই অর্ধেকের বেশি। গ্রন্থ প্রকাশনা ও আনন্দ-আড্ডা সেলিব্রিটিদের জন্মদিন উপলক্ষে অনেক সময় রাজধানীতে যেসব আনন্দ আয়োজন করা হয় তাতে কেক কাটা ও পানাহারই বড় হয়ে ওঠে। একটু ব্যতিক্রমী কিছু হলে তার আকর্ষণ বাড়ে। যেমন কোন লেখকের জন্মদিনে তার সদ্যপ্রকাশিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা হতে পারে। কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিনে গানের জলসা হতে পারে। অবশ্য আজকাল বেশিরভাগ আনন্দ-আড্ডায় গানের জন্য নির্ধারিত থাকে বেশ কিছুটা সময়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশের জন্মদিন ছিল শুক্রবার। এ উপলক্ষে পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার টাইম স্কোয়ার সেন্টারে তাকে ঘিরে এক আনন্দ-আড্ডার আয়োজন করা হয়। এতে তার সদ্য প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জিগীষা’-র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্বনামধন্য লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা কথা-গান-কবিতার এ আয়োজনে যোগ দেন। কৃতী শিল্পী ও সংগঠক বুলবুল মহলানবীশ ১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স করেছেন। দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন। ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার ১০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবি মোহাম্মদ সাদিকের বক্তব্য, শিল্পী ইফফাত আরা নার্গিসের গান এবং বেশ ক’জন আবৃত্তিকারের কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। দোলের শুভেচ্ছা মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা তুল তুল রাঙা পায়েতে ফুল ফুল বনছায়াতে পলাশের রঙ- রাঙালো কখন- চোখে সে স্বপন- আঁকে গুন গুন গুন গুন ফিরে এলো ওই ফাল্গুন দোল উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে একজন তার ফেসবুক ওয়ালে এই স্ট্যটাস লিখেছেন। সেই একজন কিন্তু মুসলিম পরিবারের। সত্যি এ এক দারুণ অসাম্প্রদায়িক চেতনা। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’Ñ এই মূলমন্ত্র জীবনচর্চার অংশ করে তুলছেন এ প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণী। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা পালিত হলো রবিবার। বাংলাদেশে এই উৎসবটি ‘দোলযাত্রা’, ‘দোলপূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধিকা এবং তার সখীগণের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় পরস্পর তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন। বিশ্বের অনেক অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতে ‘হোলি’ নামে পরিচিত। এছাড়াও নেপালে এই উৎসব ‘হোলি’ নামে পরিচিত। কোন কোন স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে ‘আবির’। দোলযাত্রা উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোমযজ্ঞ ও প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়। ১২ মার্চ ২০১৭ [email protected]
×