ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মতিঝিলের এক ব্যতিক্রমী চরিত্র কাসেম ভাইকে ঘিরে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের শৈশব স্মৃতি

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:২৩, ৮ জুন ২০২৫

মতিঝিলের এক ব্যতিক্রমী চরিত্র কাসেম ভাইকে ঘিরে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের শৈশব স্মৃতি

ছবি: সংগৃহীত

"আমি মদ খাই না, কিন্তু মদ্যপদের সঙ্গ আমাকে সবসময় আকৃষ্ট করেছে।"—এভাবেই একটি আবেগঘন স্মৃতিচারণ শুরু করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, যেটি তিনি নিজের ফেসবুক পাতায় শেয়ার করেন।

তিনি লেখেন, তার শৈশবের অনেক আনন্দময় স্মৃতি জড়িত সেসব মানুষদের সঙ্গে, যারা সস্তা বাংলা মদ বা রাষ্ট্রায়ত্ত কেরু অ্যান্ড কোং-এর তৈরি জিন কিংবা শক্তি ও সাধনা নামের কিছু গোপন প্রস্তুতকারকের মদ খেয়ে মাতাল থাকতেন।

ঢাকার মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা ছিলেন এমনই এক ব্যক্তি—সবার প্রিয় ও বিখ্যাত কাসেম ভাই। দৈনিকই তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে মদের নেশায় টালমাটাল অবস্থায় বিল্ডিংয়ের দিকে হাঁটতে দেখা যেত। মাঝেমধ্যেই তিনি হোঁচট খেতেন, পড়ে যেতেন বা বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে মজার মজার সব কথা বলতেন।

তার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় করা বক্তৃতা ছিলো উপভোগ্য ও রঙিন। তিনি বলতেন,
"সব খাইয়া ফেলামু। আমি মুক্তিযোদ্ধা। দেশটা আমি স্বাধীন করছি। আমি ছিলাম আত্মসমর্পণের সময়। এখন আমারে দেইখা তোরা মজা লস? সব খাইয়া ফেলামু! অই তোর বাপের টাকায় মদ খাই। হাওয়ার পোলারা!"

তার এসব কথা শুনতে জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেন কলোনির খালাম্মারা, বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়তেন নানা বয়সের পুরুষরা। তার নেশাগ্রস্ত গর্জন, অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাঁটা ও উদ্ভট কর্মকাণ্ড যেন কলোনির বিনোদনের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছিল।

ছয় ফুট লম্বা, জ্যাকি শ্রফের মতো দেহ এবং দাড়ির অধিকারী কাসেম ভাই সবসময় সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে থাকতেন। কখনো কখনো এত বেশি নেশাগ্রস্ত থাকতেন যে রিকশা থেকে নামার পরপরই প্রকাশ্যে প্রস্রাব করতে শুরু করতেন। সঙ্গে সঙ্গে কলোনির নারীরা জানালা-দরজা বন্ধ করে দিতেন। আর কাসেম ভাই বলতেন, "সব হালায় ভয় পাইছে। ভয় পাইয়ার কিছু নাই। আমার জিনিসপত্র দেখতেও খারাপ না!"

তবে একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ভদ্র, বিশেষ করে প্রেস সচিবের বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি সবসময় সম্মানজনক ব্যবহার করতেন।

পরে জানা যায়, বাস্তবে কাসেম ভাই কখনো মুক্তিযুদ্ধে যাননি। কলোনির আজম খানের মতো অনেকেই যুদ্ধে অংশ নিলেও তিনি ছিলেন ভীরু প্রকৃতির। নিজের মধ্যেই বীরত্বের গল্প গড়ে তোলায় সুখ খুঁজতেন।

একদিন কাসেম ভাই হঠাৎই চলে গেলেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে সকালবেলা মৃত্যুবরণ করেন। শবেবরাতের দিন সকালের দিকে তার স্ত্রীর চিৎকারে প্রেস সচিব ও তার ভাই-বোনেরা দৌড়ে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পান। মৃত্যুর সময় বড় ভাই তার ঠোঁটে পানি ছোঁয়ান। পরে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আবির

×