
ছবি: সংগৃহীত
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের ব্যাংক নোটের ডিজাইন। এক সময় দেশের নোটে প্রতিফলিত হতো প্রকৃতি, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও জাতীয় প্রতীকসমূহ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাতে যুক্ত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। সরকার পরিবর্তনের পর এই ডিজাইনের পরিবর্তন এবং আগের থিমেটিক নোটে ফিরে যাওয়ার দাবি উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন কোনো নোট বাজারে ছাড়েনি বা পুরোনো নোট তুলে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
এমন সময়ে একটি প্রশ্ন নতুন করে উঠে এসেছে—বাংলাদেশে আধুনিক বিশ্বের মতো পলিমার নোট কেন চালু হচ্ছে না?
পলিমার নোটের ইতিহাস ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা
বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ও টেকসই মুদ্রার খোঁজে পলিমার নোট বেশ পরিচিত নাম। জালিয়াতি ঠেকাতে ২০ বছরের গবেষণার পর অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৮ সালে প্রথম বাজারে আনে পলিমার ব্যাংক নোট। বাংলাদেশেও ২০০০ সালে ১০ টাকার একটি পলিমার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে সেটি আর প্রচলিত থাকেনি।
পলিমার নোট সিন্থেটিক পলিমার, যেমন বাইঅ্যাক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পলিপ্রোপিলিন (BOPP) থেকে তৈরি হয়। এগুলো পানিতে ভেজে না, ঘর্ষণ প্রতিরোধী এবং দীর্ঘস্থায়ী। একই সঙ্গে এতে জালিয়াতি প্রতিরোধী উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকে।
তাহলে বাংলাদেশে কেন হচ্ছে না?
পলিমার নোটের সুবিধার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। একদিকে রয়েছে উচ্চ উৎপাদন খরচ এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির ঘাটতি। পলিমার নোট ছাপাতে লাগে বিশেষ সরঞ্জাম, ভেন্ডিং মেশিন ও এটিএম-এ আপগ্রেড, যেটা একটি বড় বিনিয়োগ।
পরিবেশগত দিক থেকেও এটি বিতর্কিত। পলিমার নোটের মেয়াদ শেষে তা পুনর্ব্যবহার বা ধ্বংস করতে আলাদা অবকাঠামো প্রয়োজন, যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেরও অনুপস্থিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন নিরাপত্তা মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে মানুষ সাধারণত টাকা ভাঁজ করে পকেটে রাখে। পলিমার নোট দিনের পর দিন এমন ভাঁজে পড়ে গেলে কালি মুছে যায় এবং চির ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাছাড়া দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় একটি নোট গড়ে বহু মানুষের হাতে ঘুরে বেড়ায়, যা পলিমার নোটের ছাপ ও গঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পলিমার নোট নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার বাস্তবতার মুখে টেকেনি। জনঅভ্যাস, অবকাঠামোগত ঘাটতি ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো কাগজেই ভরসা রাখতে হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতের কোনো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়তো আবার নতুন করে পলিমার নোট নিয়ে ভাবতে বাধ্য করতে পারে বাংলাদেশকে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=LJoz25cxZ2E
রাকিব