
.
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে কিছু করতে দেব না। সবার আগে দেশ। দেশের প্রশ্নে বিএনপি আপোসহীন। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। তরুণরা চাকরি, ব্যবসা ও কর্মসংস্থান চায়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়। কৃষকরা ফসলের মূল্য চায়। একটা দেশ চায় যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগ সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনামুক্ত এ বাংলাদেশে সংগ্রামী মাটি চট্টগ্রামে জন্ম দিয়েছে লাখো সৈনিকের। আমাদের মহান নেতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ চট্টগ্রাম থেকে। এজন্য বীর চট্টলার মানুষকে আমরা আলাদা চোখে দেখি। এ চট্টগ্রামে শহীদ হয়েছিল জুলাই আন্দোলনের ওয়াসিম আকরাম। ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। হাজার হাজার তরুণ প্রাণ দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৫ বছর পুরো জাতির ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। ২০ হাজারের ওপর মানুষ হত্যা করেছে। প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাগারের অন্ধকারে বন্দি রেখেছিল। আমাদের তরুণ নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। তারেক রহমানের পরিকল্পনায় তরুণ নেতারা আজ চট্টগ্রামে অভাবনীয় সমাবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছি। হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু তার প্রেত্মারা এখনো আছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে আবার তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আমাদের তরুণদের সামনে টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তারা সঠিকভাবে কাজটি এখনো করতে পারছে না। এজন্য মাঝে মাঝে এ রকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আজকে এখানে যখন সভা হচ্ছে তখন আরেকটি সভা হচ্ছে এখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। ঢাকায়ও হচ্ছে। দাবিটা কি? দাবি হল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা এ মাঠে আছি তারা নয়, আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চাই না। কারণ এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এদেশের মানুষকে নির্যাতন করেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে বাকশাল করেছে। সব পত্রিকা বন্ধ করেছিল। শুধু ৪টি পত্রিকা খোলা রেখেছিল। অর্থনীতি বন্ধ করে দিচ্ছিল। সেই অর্থনীতিকে জিয়াউর রহমান এসে খুলে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এখন সংস্কার সংস্কারের কথা বলেন? আরে প্রথম সংস্কার করেন জিয়াউর রহমান। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র আনেন তিনি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিচার বিভাগ স্বাধীন, গার্মেন্টস খাত এবং বিদেশে মানবসম্পদ পাঠানো সব কিছুর শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান করেছিলেন। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ৯ বছর মাঠেঘাটে ঘুরে ঘুরে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এরশাদকে পরাজিত করছিলেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। গণতন্ত্র ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কেয়ারটেকার সরকারও করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিছু কিছু মানুষ সব ভুলে যায়। তারা মনে করে যে, বাইরে থেকে লেখাপড়া শিখে এসে আমাদের সামনে কিছু সুন্দর সুন্দর মুখরোচক কথা বললে জাতি বোধহয় সবকিছু ভুলে যাবে। তাদের বলব, আজকে এ সমাবেশ দেখেন। যদি সমাবেশ দেখে বুঝতে পারেন তাহলে জাতি উপকৃত হবেন।
একটা দেশ চায় যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে। যেটা সহনশীলতার মধ্য ঐক্যের মধ্য দিয়ে হবে। তারেক রহমানের এ তারুণ্যের সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য, এ তরুণরাই জেগে উঠেছে। আপনারাই পরাজিত করেছেন ফ্যাসিস্টকে। সেই তরুণদের বলছি আপনারাই জেগে উঠুন। আপনার অধিকার আপনারা কেড়ে নিন। মাথা ঠান্ডা রেখে সজাগ থেকে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে কোনো কিছু করতে দেব না। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। যে কারণে তারেক রহমান বলেছিলেন, সবার আগে বাংলাদেশ। এর আগে বলেছেন, ফয়সালা হবেন-রাজপথে। টেক ব্যাক-বাংলাদেশ। আর এবার বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ।
তরুণদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমরা দেখতে চাই সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। বাংলাদেশের মাথাটা এবং পতাকা পত পত করে উড়বে। মাথা উঁচু করে থাকবে। আমাদের সমাবেশ মঞ্চে তামিম আছে। সে চট্টগ্রামের ছেলে। সে অসংখ্য তামিম সে তৈরি করতে বলেছে। সবাই সেদিকে যাবেন। চট্টগ্রামকে স্যালুট। শহীদ ওয়াসিমকে শ্রদ্ধা জানাই। তবে সরকার পাঠ্যপুস্তকে শহীদ ওয়াসিমের নাম দেয়নি। আমরা বিশ^াস করি বর্তমান সরকার সংশোধন করে ওয়াসিমের নাম সংযুক্ত করবেন।
ম্যাডাম যেদিন ফিরে আসেন সেদিন লাখ মানুষ রাজপথে ছিল। আজকে সমাবেশ লাখ মানুষের সমাবেশ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দয়াকরে মতবাদকে সঠিক পথে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সঠিক পথে আনতে। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে আজকে সমাবেশে বক্তব্য শেষ করছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তামিমকে দেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রামের তরুণ সমাজ ছক্কা মেরেছে। চট্টগ্রামে তরুণদের জুলাই আন্দোলনের যে নেতৃত্ব হয়েছে তার কৃতিত্ব দিতে হবে। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রামের আন্দোলনে বুক পেতে দিয়েছিল সেদিন। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্যাতন মামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু আন্দোলন থেমে থাকেনি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আপনারা স্বৈরাচারকে বিতাড়ন করেছিলেন। আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য। সেই গণতন্ত্র যাতে কারও হাতে জিম্মি হতে না পারে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেই লক্ষণ আমরা দেখছি। বাংলাদেশকে জিম্মি করে কারও স্বার্থ আদায় করা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন এসেছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শুনি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দিয়েছেন। ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়েছি। কারণ আগামী নির্বাচনে জনগনের ম্যান্ডেট চাইব। জনগণ রায় দিলেই ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন হবে। সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। সেই সরকারই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে। এখানে কোনো গোজামিলের কথা নাই। কেউ যদি না বুঝে থাকে তাহলে তাকে বুঝানো যাবে না। কেউ যদি জেগে ঘুমের ভান ধরে তাহলে তাকে জাগানো যাবে না। আমরা চট্টগ্রামের এ সমাবেশে তরুণরা উপস্থিত হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কেউ বানচাল করতে পারবে না। গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে।
তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, বিশেষ বক্তা ছিলেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তারুণ্যের সমাবেশে সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। এছাড়া চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে প্রথম শহীদ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের বাবা শফি আলম।
সমাবেশে ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ॥ তারুণ্যের সমাবেশের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত হওয়া ক্রিকেটার তামিম ইকবাল বলেন, আমি আপনাদের ভালবাসা দেখেই অভিভূত। আপনারা যদি মনে করে অমুকের জন্য খেলতে পারি নাই অমুকে কারণে যেতে পারি নাই, সেটি একজন খেলোয়াড়ের কথা হতে পারে না। চট্টগ্রামের খেলাধূলা হয়েছে হুম্মাম ভাই, হেলাল ভাই, ইসরাফিল ভাইয়ের কথায় । উনারা যখন সুযোগ পাবেন তাদের বেস্ট ট্রাই করবে সকল খেলার জন্য। ক্রিকেট, ফুটবল সবকিছু আগের দিনে ফিরে যাবে। আমার বেশি কথা বলা উচিত না, আমি অসুস্থ ছিলাম। আবারও দেখা হবে।
সমাবেশের কারণে তীব্র যানজট ॥ পলোগ্রাউন্ডে তারুণ্যের সমাবেশ উপলক্ষ্যে দুপুর থেকে জন¯্রােত সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা ও ৯৯টি উপজেলা থেকে যোগ দেয় বিএনপি সমর্থিত তরুণরা। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগানে খ- খ- দলে বিভক্ত হয়ে যোগ দেয় তরুণরা। ফলে দুপুর থেকে পলোগ্রাউন্ড সন্নিহিত এলাকাজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।