
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকে চায় নির্বাচন কমিশন
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকে চায় নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে কমিশন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব দিয়েছে।
বুধবার নির্বাচন কমিশন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে লিখিতভাবে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে জানিয়েছে বলে জানা গেছে। ইসি সচিব জানান, আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে লিখিত মতামত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২টির বেশি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব (দুই একটা কম বেশি) বলে জানিয়েছে ইসি।
বুধবার নির্বাচন কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশন সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার সুপারিশ চূড়ান্ত করেছি। এটা এখন পাঠিয়ে দেব। এখানে তিন ধরনের ক্যাটাগরি ছিল। যেটা আশু বাস্তবায়নযোগ্য কিন্তু রাজনৈতিক কোনো বিতর্ক নাই, সেগুলো আমরা দিয়ে দিয়েছি।
যেগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করিনি। আবার যেগুলো আগে দিয়েছি সেগুলো বলেছি। কিছু আছে, নির্বাচন কমিশন নিজেই বাস্তবায়ন করবে। বিধি সংশ্লিষ্ট যেগুলো সেগুলো ইসি করতে পারবে। রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়গুলোতে একমত হবে, সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।
আইনি বাধ্যবাধকতায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ ॥ আইন মন্ত্রণালয় দ্রুততম সময়ে মতামত না দেওয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতায় ইশরাকের গেজেট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল ইসি। এরপর কমিশন বৈঠক করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাস্তবায়নে গেজেট প্রকাশ করে বলে জানান তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্ধারিত সময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত না আসায় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাস্তবায়ন করতেই ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। আদালতের আদেশের যেন ব্যত্যয় না ঘটে সেটা (গেজেট প্রকাশ) বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
এরপর ২৭ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরদিন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ের মতামত দেওয়ার আগেই ইসি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নামে গেজেট প্রকাশ করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রয়োজন না হলেও এক্ষেত্রে ইসি মতামত চেয়েছিল।
বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার আগেই গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে বাধ্যবাধকতা ছিল ১০ দিনের মধ্যে এটার নিষ্পত্তি করার, আমরা নিষ্পত্তি করেছি। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিলাম।
২৫ এপ্রিল ছিল দশম দিন শুক্রবার; পরদিন শনিবার ছুটি। রবিবার ২৭ এপ্রিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি, রিপ্লাই না পেয়ে আমরা কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে এটা করেছি। নির্বাচন কমিশন সংক্ষুব্ধ ‘পার্টি’ না হওয়ায় আপিলেও যায়নি বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার।
ইশরাকের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় মেয়র হিসেবে শপথ আয়োজনের বিষয়টি দেখভাল করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সেক্ষেত্রে কয়েক মাসের জন্য দায়িত্ব পাচ্ছেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শপথ পর্যন্ত। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন।
দেশে কোভিড মহামারি শুরুর পর ১৬ মে দায়িত্ব নেন তাপস। আর জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রথম সভা হয়। সেই হিসেবে এ সিটি করপোরেশনের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে।
আরও সহজ হচ্ছে এনআইডি সংশোধন ॥ সংশোধনের অপেক্ষায় থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আবেদন নিষ্পত্তি কার্যক্রম আরও সহজ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। অসৎ উদ্দেশ্য না থাকলে এনআইডির সংশোধনী আবেদনগুলো সহজভাবে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, যেসব এনআইডি সংশোধনের আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে, এটাকে কী করে সহজীকরণ করা যায় সে বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বিষয়গুলো মনে হবে, ব্যক্তি নাগরিকদের যদি অসৎ উদ্দেশ্য না থাকে, সেগুলোকে সহজভাবে সমাধান করে দেওয়া হবে। অনেকে দ্বৈত কার্ড বা এনআইডি নিয়েছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাদের ক্ষেত্রে ভুলভাবে কেউ দুইবার নিলে প্রথমটা থাকবে, দ্বিতীয়টা বাদ যাবে।
এ ছাড়া বয়স বেশি কিন্তু তা কমিয়ে একটা চাকরি নিয়েছে এমন হলে আমরা নিরুৎসাহিত করব। এমন হলে সেটা কমিশন পর্যন্ত আসবে। আবার পুরো পরিচয় পরিবর্তন করতে চাইলে আমরা কঠোর হব। এ ক্ষেত্রে সময় লাগলেও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করতে হবে। ডাটা সেন্টারের স্বচ্ছতার জন্যও এটা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ম্যাচ ফাউন্ড আছে দুই লাখ ৯ হাজার। যেটা দশমিক ১৬ শতাংশ। অনেক সময় শ্রমিক ভাই বা মা-বোনদের কারও কারও আঙ্গুলের ছাপ পরিষ্কার থাকে না। এ কারণে ফলস ম্যাচ আসে। এগুলো যেন দ্রুত করতে পারি, সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকেই দুই আইডি নেওয়ায় ম্যাচ হয়েছে। এটা নাইন আউট অব টেন। যারা আমাদের সেবা নিয়ে থাকে, সেই আইনটা সহজ করে যেন সেবাটা সহজে দেওয়া যায়।
ইসি সচিব বলেন, কেউ বলেছে ব্যালট পেপারে জলছাপ। এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাই এটা আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য মনে করি না। ১০ থেকে ১০ সুপারিশ হবে। যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন এবং আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এই বিষয়গুলো বাদে অন্যগুলো নিয়ে আমরা সুপারিশ করেছি।