ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

ঈদ আনন্দ ঘরে ঘরে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২০ এপ্রিল ২০২৩

ঈদ আনন্দ ঘরে ঘরে

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল শনিবার অথবা পরের দিন রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামীকাল শনিবার অথবা পরের দিন রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। পবিত্র রমজানে পুরো একমাস রোজা পালন শেষে সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করবেন সারা দেশের মুসলিমরা। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিনটি। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো একমাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
ঈদে নতুন জামা-কাপড় কেনাবেচায় প্রচ- ব্যস্ততা চলছে সারাদেশের শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে। নাড়ির টানে শহরের মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পত্রিব ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে। সড়ক মহাসড়কে এখন ঘরমুখো মানুষের ভিড়। 
রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও এবার অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে এ জামাত সম্ভব না হলে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে পাঁচদিনের সরকারি ছুটি চলছে। সরকারি, আধাসরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হয়। ঈদুল ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনগুলোসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর শনিবার নাকি রবিবার উদ্যাপিত হবে-তা জানা যাবে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায়। ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণে আজ সন্ধ্যায় সভায় বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এ সভা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ১৪৪৪ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। একমাস রমজানের রোজা শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়।
দীর্ঘ একমাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর সাওয়ালের প্রথম দিনে পালন হয় ‘ঈদুল ফিতর।’ আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় বলা যায়- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।’
শুক্রবার দেশের আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন শনিবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে শনিবার রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে ঈদ উদ্যাপিত হবে রবিবার। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ টেলিফোন নম্বরে ফোন করে এবং ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করে বা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। 
তবে মালয়েশিয়ায় বৃহস্পতিবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে, দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে আগামী শনিবার (২২ এপ্রিল)। মালয়েশিয়ার মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও বৃহস্পতিবার খালি চোখে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওই অঞ্চলের ১৩টি আরব দেশের ২৫ জন জ্যোতির্বিদ্যা বিশেষজ্ঞ যৌথভাবে এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশের আকাশ মেঘমুক্ত সাপেক্ষে দেশের সব বিভাগ থেকে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাওয়ার কথা। পরে আবার তা সংশোধন করা হয়। 
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির মতামত না নিয়ে শুক্রবার চাঁদ দেখা যাবে এবং শনিবার ঈদ হবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন ঘোষণায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কারণ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু কমিটির মতামত না নিয়েই শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে এবং ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদুল ফিতর উদ্যাপন হবে- এমন বার্তা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবারের দেওয়া সেই বার্তা সংশোধন করে এখন ‘চাঁদ দেখার সম্ভাবনা’ আছে এমন নতুন বার্তা দিয়েছে অধিদপ্তর।
বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ২৯ রমজান সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাবে। সে হিসাবে শনিবার বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। একদিনের ব্যবধানে এ বক্তব্যে সংশোধনী এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার রাতেই সেই স্থানাঙ্কের প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরে রাতেই চাঁদের স্থানাঙ্ক উল্লেখ করে অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাঁদ পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দিয়ে ‘প্রশাসনিক মেসেজ’ জারি করা হয়। সেখানে শুক্রবারে চাঁদ দেখার বিষয়ে বলা হয়েছে, অবস্থানগত কারণে আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর শনিবারের চাঁদ দেখার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সব স্থানেই বড় চাঁদ দেখা যাবে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, চাঁদ দেখা যেহেতু ধর্মীয় বিষয়, তাই ‘দেখা যাবে’ এর স্থলে ‘সম্ভাবনা আছে’ বলে বুধবারের চাঁদের স্থানাঙ্কের পূর্বাভাসের স্থলে নতুন সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকারের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেহেতু চাঁদ দেখার জন্য সরকারের একটি কমিটি রয়েছে, তাই তারাই চাঁদ দেখার বিষয়টি নির্ধারণ করবেন। আপাতত এই সংশোধনীটুকু প্রচার করেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতি মাসেই চাঁদের স্থানাঙ্ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে অধিদপ্তরের জলবায়ু শাখা। যথারীতি গত ৫ এপ্রিল সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু এবার চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। বিষয়টি না বুঝেই তারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলে সংশোধনী আনা হয়। বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আজ শুক্রবার অর্থাৎ ২৯ রমজান সূর্যাস্তের সময় অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আরবি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে। ওই সময় চাঁদটি চন্দ্রতিথির দ্বিতীয়ায় অবস্থান করবে এবং তখন চাঁদের বয়স থাকবে ১.৩৪০৫ দিন। সেদিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদের অলটিটিউড থাকবে ১৬ ডিগ্রিতে। সে হিসেবে ওই দিনই চাঁদ দেখা যাবে। তার পরদিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল বা ৩০ রমজানের সূর্যাস্তের সময় চন্দ্রতিথির তৃতীয়ায় অবস্থান করবে চাঁদ এবং সেই সময় চাঁদের বয়স থাকবে ২.৩৪০৭ দিন। এ সময় চাঁদের অলটিটিউড থাকবে ২৮ ডিগ্রির ওপরে। তাই সেদিন বাংলাদেশের সব স্থানেই চাঁদটিকে বড় দেখা যাবে। প্রথমে ২০, ২১ ও ২২ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় ঢাকায় চাঁদের স্থানাঙ্কে আবহাওয়া বিভাগ বলেছিল, ২১ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় চন্দ্রতিথির দ্বিতীয়া। সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ১.৩৪০৫ দিন। শুক্রবার চাঁদ দেখার নির্ধারিত সময় ৬টা ২৫ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত। সান্ধ্যকালীন গোধূলির সময় চাঁদের স্থায়িত্ব হবে ৫৩ মিনিট ৮ সেকেন্ড। একইসঙ্গে চাঁদের অ্যাজিমাথ (দিগংশ) ও অলটিটিউড (উচ্চতা) প্রকাশ করে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাবে বলে স্থানাঙ্কের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ॥ ইসলামে কোনো অনুষ্ঠানই অযথা বা অনর্থক পালনীয় নয়। এর মধ্যে নিহিত আছে সুদূরপ্রসারী শিক্ষা। এ হিসেবে ঈদুল ফিতরে যেমন আছে আনন্দ ও ইবাদত, তেমনি আছে সুসংঘবদ্ধতার মহান শিক্ষা। বিশিষ্ট লেখক মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খানের ভাষ্য এখানে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘ঈদ রুচিশীল ও মননশীল সংস্কৃতির শিক্ষা দেয়। ঈদ উৎসব সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। চাঁদ দেখে রোজা শুরু করা ও শেষ করার মধ্য দিয়ে যেমন সময়ানুবর্তিতা শেখায় তেমনি ইফতার, সেহরি ঈদগাহের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়েও সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে মুসলমানদের জীবনে ঈদুল ফিতর এক উজ্জ্বল ও সুন্দর শৃঙ্খলাবোধের সম্মিলন ঘটায়।’ 
মূলত রমজান এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। এ কোর্সের প্রশিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ এবং শিক্ষার্থী হলো মুসলিম উম্মাহ। এর সিলেবাস রমজানের নিয়ম-কানুন এবং নম্বরপত্র হচ্ছে তাকওয়া অর্জন, আর এর সুদূরপ্রসারী ফল হচ্ছে বাস্তব জীবনের প্রত্যেক ধাপে ধাপে প্রতিটি পদে পদে তাকওয়ার সুচিন্তিত শিক্ষা। এছাড়া মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য, শক্তি, শান্তি ও প্রগতি তথা ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার  বৈষয়িকতা ও আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা পাওয়া যায় ঈদুল ফিতর থেকে। ধনীর পক্ষ থেকে গরিবের প্রতি ঈদগায় যাওয়ার পূর্বেই জাকাত প্রদান করে দয়া ও সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিলে ঈদুল ফিতরে।

×