ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোপালগঞ্জ-২

আটবার নির্বাচিত শেখ সেলিমের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আটবার নির্বাচিত শেখ সেলিমের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই

.

শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত গোপালগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোপালগঞ্জ-২। গোপালগঞ্জ পৌরসভা সদর উপজেলার ২১ ইউনিয়ন এবং কাশিয়ানী উপজেলার ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটিতে রয়েছেন টানা বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য . শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শুধু বারের এমপিই নন, প্রতিটি নির্বাচনেই প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার সর্বাধিক ভোট ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তার।

১৯৮০ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ফরিদপুর-১০ আসনের উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৪ সালে গোপালগঞ্জ জেলা হওয়ার পর গোপালগঞ্জকে তিনটি আসনে ভাগ করা হয় এবং ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ- আসন থেকে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তিনি একদিকে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে, অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ভাই।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পরে শেখ ফজলুল করিম সেলিমই প্রথম জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুই কন্যা শেখ হাসিনা শেখ রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছিলেন। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে তিনি গোপালগঞ্জবাসীকে আগলে রেখেছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গোপালগঞ্জের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূল কারণই হলো সংখ্যালঘুদের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। তার স্নে, মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ের গভীরে। একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবহেলিত উন্নয়নবঞ্চিত গোপালগঞ্জের উন্নয়নে সদাজাগ্রত ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ চিকিৎসা-সেবার মান প্রসার ঘটেছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম চক্ষু হাসপাতালবঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’, সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্লান্ট, ট্রমা সেন্টার। শিক্ষার প্রসারে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, পিটিআই, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্কুল কলেজ।

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতার চেষ্টায় গোপালগঞ্জে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, শিশুপার্ক, অডিটরিয়াম, সুইমিং পুল, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, শিশু একাডেমি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, আবহাওয়া অফিস, সার্ভার স্টেশন, রেডিও স্টেশন, ফায়ার-সার্ভিস স্টেশন, এনএসআই ভবন, আনসার-ভিডিপি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়ার্টার, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ১২ তলাবিশিষ্ট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন বিসিক শিল্প পার্কসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। স্থাপিত হয়েছে রেল যোগাযোগ। জেলা হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ প্রশস্ত সড়কে পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর সঙ্গে অভাবনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এলাকার অসংখ্য মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নবঞ্চিত গোপালগঞ্জকে আধুনিক গোপালগঞ্জে রূপান্তর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

তিনিই আসনের অভিভাবক। একারণেই আসনের ভোটারগণ প্রতিবারই বিশাল ভোটের ব্যবধানে তাকে বিজয়ী করেন। আর প্রতিবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে একাধিকার সর্বাধিক ভোট ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার। সুতরাং আসনে তার কোনো বিকল্প নেই।

জনকণ্ঠকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশকে এবার স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং আধুনিক গোপালগঞ্জকেও আগামীতে স্মার্ট গোপালগঞ্জে রূপান্তর করতে যা যা করণীয় সবই করা হবে।

এদিকে আসনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা কখনোই মানুষের মনে ঠাঁই করতে পারেনি। তাদের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমও দৃশ্যমান নেই। গত দুবছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে জেলা বিএনপির কার্যক্রম চলছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, জেলায় দলকে সুসংগঠিত করতে তিনি কাজ করছেন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসনে তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন। সে লক্ষ্যে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এক সময়কার বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের জিএস ভিপি ছিলেন ডা. কে এম বাবর আলী। তিনিও আসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। বিএনপি নির্বাচনে গেলে তিনিও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। এছাড়াও বিগত নির্বাচনগুলোতে আসনে যারা বিএনপি প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন এমন একাধিক প্রার্থী আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঢাকায় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদেরও যে কেউ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের কথোপকথনে পাওয়া যায়।

এদিকে, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহীন জানিয়েছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি থেমে ছিল। এখন আবার সারাদেশে কমিটি হচ্ছে। গোপালগঞ্জেও জাতীয় পার্টিসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি করা হচ্ছে। মুহূর্তে জেলায় তাদের দলীয় মুখপাত্র হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ- আসনে তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি গোপালগঞ্জ- আসনে এবং ২০১৪ ২০১৮ সালে গোপালগঞ্জ- আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

এছাড়াও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ- আসনে প্রার্থী হতে পারেন জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মওলানা তসলিম হুসাইন শিকদার। সে লক্ষ্যে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই তাদের প্রার্থী থাকবে। ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করা হচ্ছে। সংগঠনের বিস্তার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে তারা কাজ করছেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেলা জাসদের সভাপতি শেখ মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে জেলা প্রতিটি উপজেলায় তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। ১৪ দলকে আরও শক্তিশালী করে দলের নেতৃত্বে তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৪ দলের কাছে জাসদ মনোনয়ন চাইবে। সে লক্ষ্যে গোপালগঞ্জের তিনটি আসনেই তাদের দলীয় প্রার্থী কাজ করে যাচ্ছেন।

 

আরো পড়ুন  

×