ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

অমর একুশে বইমেলা কাল শুরু

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

অমর একুশে বইমেলা কাল শুরু

অমর একুশে বইমেলা

বাকি শুধু আজকের দিন। আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির মনন উৎকর্ষতার প্রতীক অমর একুশে বইমেলা। সেই সুবাদে সোমবার বিকেলে মেলার দুই ক্যানভাস সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি আঙিনায় চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অধিকাংশ স্টল কিংবা প্যাভিলিয়নের কাজ প্রায় শেষ। রং করা, নান্দনিক নকশা গড়াসহ স্টলের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে মেলা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকাশকরা। 
দুই বছরের মহামারির ধকল পেরিয়ে এবার যথাসময়ে অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত মাসব্যাপী বইমেলা। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বুধবার বিকেল তিনটায় মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উন্মোচন করবেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ । শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। 
নান্দনিক বিন্যাসের পাশাপাাশি এবার বইমেলার পরিসর  বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে অনুষ্ঠিত হবে মেলা। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এবং বাংলা একাডেমি মিলিয়ে মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পাবে ১৫৩টি স্টল। 
এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।
সোমবার বাংলা একাডেমি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। মেলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন একাডেমির পরিচালক ও বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বইমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নওবত আলী ও মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রসওয়ার্ক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বইমেলায় পাইরেসি বড় ইস্যু। অনেক সময় দেখা যায়, একই বিষয় নিয়ে ১০-১২টা বই মেলায় চলে আসে। বিশেষ করে অনূদিত বইগুলোর বিষয়ে লেখক-প্রকাশকরা  তো মূল প্রকাশক বা লেখকের অনুমতি নেন না। এসব বিষয়ে টাস্কফোর্স কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তবে সার্বিকভাবে বলতে হয়, ভালো লেখা এবং নির্ভুল সম্পাদনার বইও এখন কম প্রকাশিত হয়। অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা পরিষদ না থাকায় এমনটা ঘটে। তাই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রকাশকরা সহযোগিতা করলে এবং  সুসম্পাদিত বইগুলো তথ্যকেন্দ্রে জমা দিলে নিশ্চয়ই সেই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা বাড়বে। 
মীর নহবত আলী বলেন, এবারও বইমেলায় বিকাশের পক্ষ থেকে বই  কেনায় ছাড় থাকবে। বইয়ের ক্রেতারা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবে। কেউ ৫০০ টাকার বই কেনার পর বিকাশে মূল্য পরিশোধ করলে ৫০ টাকার ডিসকাউন্ট কুপন পাবে।
এবার বইমেলায় নতুন পুরনো মিলিয়ে ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। তার মধ্যে বইমেলার প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পাঠ বিশ্লেষণ‘, ‘আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা-পাঠ বিশ্লেষণ’ এবং হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’র মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রীা।

এ ছাড়া বাংলা একাডেমি থেকে এবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ প্রকাশিত হবে, যার মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা একাডেমি বিভিন্ন জেলায় যে মেলাগুলোর আয়োজন করেছে গত বছর সেসব সংকলন সাত খ-ে প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। প্রথম খ-টির মোড়ক উন্মোচন হবে বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চে। 
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় একাডেমি আঙিনায় মেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।  
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।  মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমাকৃত নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে। 
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে। 
মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়।

×