ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ ছাড়ে কড়াকড়ি

ধীরে চলো নীতি ॥ প্রকল্প ব্যয়ে

ইয়াহইয়া নকিব

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

ধীরে চলো নীতি ॥ প্রকল্প ব্যয়ে

.

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যা গত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় সবচেয়ে কম। অর্থাৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের গতি কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেছে এডিপি বাস্তবায়নে। আর প্রকল্প বিন্যাসের মাধ্যমে অর্থছাড়ে সতর্কতাকে যথার্থ বলছেন অর্থনীতিবদিরা।

সম্প্রতি সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এডিপি বাস্তবায়নের এমন তথ্য মিলেছে। অর্থবছরের শুরুতেই সরকার বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব উন্নয়ন প্রকল্প তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করে অর্থায়ন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর সকারের এমন সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠন সিপিডির বিশেষ ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রকল্প ব্যয় কামনোর সিদ্ধান্তটি ঠিক ছিল। আর বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিলে রিজার্ভের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক হবে। তবে এডিপি বাস্তবায়ন কমলে প্রবৃদ্ধিও কমতে পারে মন্তব্য করে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেন তিনি।
আর প্রকল্প ব্যয় হ্রাস করায় তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ড. মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, সরকারের ব্যয় কমানোর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমানো হয়েছে। ফলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। আর সরকারের কৃচ্ছ্র কর্মসূচী ও আমদানি হ্রাসের কারণে এডিপি কিছুটা কমেছে বলে মনে করেন তিনি।  
এর আগে অর্থবছরের শুরুতেই এডিপিতে থাকা ১ হাজার ৩৭২টি প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা সজিয়েছিল সরকার। এসব প্রকল্প এ, বি, এবং সি- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে এ ক্যাটাগরিতে থাকা ৬৪৬ প্রকল্পে বরাদ্দ করা অর্থ আগের মতোই ব্যয় হবে। তবে বি, ক্যাটাগরিতে থাকা ৬৩৬ প্রকল্পের বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের গতি কমিয়ে আনা হয়েছিল।
আর সি ক্যাটাগরিতে থাকা ৮১টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে কৃচ্ছ্রতা  সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সাত শতাধিক প্রকল্পের কাজে বরাদ্দ ও গতি কমিয়ে আনা হয়েছিল। যার প্রভাব মিলেছে এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদনে।
আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৬০ হাজার ২৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ আছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়নের হার ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
এদিকে গত পাঁচ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে একটু বেড়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়।
আর একক মাস হিসেবে শুধু ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১৩ হাজার ১২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই এক মাসে বাস্তবায়নের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের বছরের ডিসেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ। ৪২ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও আলোচ্য সময়ে ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
অন্যদিকে প্রথম ছয় মাসে এখনো ব্যয়ের খাতা খুলতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাত্র শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করে এর পরেই আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। একই সময়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ২০ শতাংশের নিচে। আর স্বাস্থ্য খাতের দুই প্রতিষ্ঠানও এডিপি বাস্তবায়নে করেছে ১০ শতাংশের নিচে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্প সংখ্যা এক হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প এক হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ ৯টি। এসব প্রকল্পের মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং এক হাজার ২৯৬টি বিনিয়োগ প্রকল্প।

 

×