ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুশি কৃষক

বগুড়ায় মাঠজুড়ে শীতের আগাম সবজি

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০০:০১, ১৭ অক্টোবর ২০২২

বগুড়ায় মাঠজুড়ে শীতের আগাম সবজি

বগুড়ায় সবজির মাঠে পরিচর্যায় নারী কৃষক (বাঁয়ে), লাল শাকের খেত পরিচর্যা করছেন কৃষক (ডানে)

কার্তিকের এই সময়টায় মাঠে আমন ফসল থাকার কথা। আছেও তাই। তবে আমন আবাদের চেয়েও বেশি চোখে পড়ছে শীতের অনেকটা আগেই শীতের সবজি আবাদ। কৃষক বলছেন, এগুলো শীতের আগাম সবজি। প্রকৃত শীতের সবজির আবাদ শুরু হবে এই সবজি ওঠার পর। সবজি আবাদে তারা কোনো ফাঁকা জমি রাখছে না। বাড়ির উঠানে বহির্আঙিনায় (খুলি) লাল শাক সহ সব ধরনের শাক মূলা চিচিঙ্গা সিম ফুলকপি বাঁধাকপি ঢ্যাঁড়শ টমেটো আবাদ করছে। বাঁশের জাংলা বসিয়ে লাউ করলা আবাদ করছে।
মাঠ পর্যায়ের কৃষক বলছেন, ধান আবাদের চেয়ে সবজি আবাদে লাভ বেশি। এখন ভর বছর সব ধরনের সবজি ফলানো যায়। ফলন উঠতে কম সময় লাগে। সবজি বেচা যায় ভর বছর। ধানে তা হয় না। আমন আউশ বোরো এগুলো সময়ের ধান। ঋতুর পালাবদলে ফসল সব সময় থাকছে। সকল ঋতুতে ফলানোর ধানের অনেক ভ্যারাইটি এসেছে। শীতের সবজি গ্রীষ্ম বর্ষা শরতের মধ্যে ফলছে! এমনটিই ঘটেছে বগুড়ায়। শীত আসতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। এর মধ্যে বগুড়া সদর শিবগঞ্জ মহাস্থানগড় ও তার আশেপাশের এলাকা, শাজাহানপুর শেরপুর ধুনট সারিয়াকান্দি সোনাতলা কাহালু নন্দীগ্রাম উপজেলার গ্রামগুলোতে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বরবটি, সিম, পালং শাক, পুঁই শাক, বেগুন, মুলা, গাঁজর, করলা সহ শীতের সব ধরনের সবজি ফলছে।
শিবগঞ্জের উথলি গ্রামের প্রবীণ কৃষক মালেক উদ্দিন বললেন, ‘কিছুই কওয়া যায় না বাপো। কলিকালে সব পাল্টে গেছে। গরমের মধ্যে ফুলকপি মুলা বেগুন গাঁজর হয় তাও দেখা লাগিচ্চে।’ এই বিষয়ে কৃষি বিভাগ জানায়, সময়ের ঋতু সময়ে ঠিক থাকছে না। প্রকৃতির মতিগতি পাল্টে গিয়েছে। এখন সকল সিজনে সব ধরনের ফসল মিলছে। তা ছাড়া উন্নত জাতের অনেক বীজ এসেছে। বাড়তি পরিচর্যায় শীতের আগাম সবজি চাষ হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা  হয়েছে ৪ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর ভূমি। যা গত বছরের চেয়ে দেড় হাজার হেক্টর বেশি। এবার শীত মৌসুমের আগে এবং শীত মৌসুমে অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর ভূমিতে সবজির আবাদ হবে। এ থেকে উৎপাদন ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ মে. টন সবজি। গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় যেভাবে সবজি আবাদ হচ্ছে তাতে আশা করা যায় ৭ লাখ টনেরও বেশি সবজি আবাদ হবে। গ্রামে সবজি অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে।     
এদিকে বগুড়া অঞ্চলে শীতের অনেকটা আগেই যে কুয়াশাপাত হচ্ছে তা শীতের সবজির আগাম আবাদকে এগিয়ে দিচ্ছে। বগুড়ার মাঠে এখন পুরুষের পাশাপাশি নারী কৃষকদেরও সবজির মাঠ পরিচর্যায় দেখা যায়। শাজাহানপুরের আব্দুল মালেক বললেন, তিনি আষাঢ় মাসে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করেছিলেন দশ শতাংশ জমিতে। বৃষ্টি না হওয়ায় সবজি ভালো হয়েছে। তিন হাজার টাকা মণ দরে ফুলকপি বিক্রি করেছেন। শীত মৌসুমের চেয়ে দ্বিগুণ দাম পেয়েছেন। তিনি জানান, গত ছয় মাসে তিনবার সবজি ফলন ঘরে তুলেছেন। শীতের সবজি আগাম বেচলে বেশি দাম পাওয়া যায়।
শিবগঞ্জের উত্তর শ্যামপর, মাঝপাড়া, বাকসন, এনায়েতপুর, সাদুল্লাপুর, জামালপুর, বাড়ুগড়, রায়নগর, কাজীপুর এবং মহাস্থানগড়ের আশেপাশের গ্রামে এই সময়ে কৃষক এক ফসল সবজি বিক্রি করে পুনরায় সবজি আবাদের কেউ চারা রোপণ করছে কেউ উঠতি সবজি আবাদে পরিচর্যা করছে। সবই শীতের আগাম সবজি। এই সবজির তরকারির স্বাদ কী শীতের সবজির মতো! এমন প্রশ্নে উত্তর মেলে পার্থক্য আছে। বগুড়া নগরীর গৃহিণী কামরুন নাহার বললেন, তিনি শাকের রাজা পালং শাক রেঁধেছিলেন। স্বাদ একই। আগাম পালং শাক পাতার আকার বড়। শীতের লাল শাকের চেয়ে আগাম লাল শাকের স্বাদ ভালো।
এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, গত ক’বছর ধরেই বগুড়া অঞ্চল সবজি আবাদে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর সবজি আবাদের জমি বাড়ছে। ঋতুর পালাবদলে বগুড়া অঞ্চলে সব মৌসুমে সব ধরনের ফসল ফলছে। এগিয়ে আছে সবজি আবাদে।

 

×