
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জমিদার বাড়ী
ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নে বেলীশ্বও গ্রামে অবস্থিত প্রায় দুইশ বছরের পুরাতন বেলিশ্বর জমিদার বাড়ী আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে জমিদার মদন মোহন রায় চৌধুরী এ জমিদার বাড়ী প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে এটি বেলীশ্বর জমিদার বাড়ী নামে পরিচিত।
জমিদার মদন মোহনের দুই ছেলে, মোহিনী মোহন রায় চৌধুরী ও রায় মোহন চৌধুরী। মোহিনী মোহনের দুই ছেলে মেলিন্দ মোহন রায় চৌধুরী ও মেদেনি মোহন রায় চৌধুরী। অন্য দিকে রায় মোহনের ছেলে জমিদার কুমুদ মোহন রায় চৌধুরী। মূলত কুমুদ মোহনের সময়েই এই জমিদার বংশের শান শওকাত বেশি ছিল। এই পরিবারের সাথে বালিয়াটি জমিদার পরিবারের বিবাহ জনিত আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কালের বিবর্তনে এই জমিদার বাড়ী ধ্বংস প্রায়।
একটি সুবিশাল দূর্গা মন্দির, দুটি টিনের কাঠের কাছারি ঘর, একটি ঘাট সহ দীঘি আর একটি ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়ী এখনও জমিদারির অস্তিত্ব জানান দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের বেলিশ্বর গ্রামে মোহিনী ও মেদেনী মোহন নামে দুই ভাইয়ের জমিদার বাড়ির অবস্থান। পাশেই মোহেনী মোহন নামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। বেলিশ্বর জমিদার বাড়িটি অযতœ-অবহেলায় আজ ধ্বংস হতে চলেছে।জমিদার বাড়ির ইট খসে পড়ছে, সবকিছু ভেঙেচুরে পরিণত হচ্ছে ধ্বংসস্তুপে।
স্থানীয় বৈয়জৈষ্ঠ্যরা বলেন, জমিদার মোহিনী মোহন ও তার ভাই মেদেনী মোহন রায় সুবিশাল জমিদারি এলাকা ও মনোরম প্রাসাদ ছেড়ে ভারতে চলে যান। প্রায় দুইশত বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে উঠেছিল এই জমিদারের প্রাসাদ। প্রাসাদের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো লম্বা নারকেল গাছ ও ইট-সুরকি দিয়ে নির্মিত পাকা কারুকাজময় বিশাল প্রাচীর। এ প্রাচীর সংলগ্ন তিন দিকেই কয়েকটি বড় পুকুর ও দক্ষিণ পাশে ছিল জমিদার মোহিনী মোহনের বিচারালয়। পূর্ব পাশে ছিল অতিথিশালা। সেখানে কয়েক বছর আগেও পুলিশ ফাঁড়ি এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল। এখন ভবনগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কায় পুলিশ সদস্য ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অন্যত্র চলে গেছেন। জমিদারের শোবার ঘরটি ভেঙে এখন ইট-সুরকির স্তুপে পরিণত হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমিদারবাড়ির দরজা-জানালা, অনেক মূর্তি, পাথর, বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে। এলাকাবাসী এ জমিদারবাড়ি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে।
জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসা সাইফুল ইসলাম জানান,জমিদার বাড়িটির সংস্কারের অভাবে সুরকি ইট বালু আস্তে আস্তে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে যাচ্ছে। হয়তো এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। এখন সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বাড়িটি রক্ষায়।
অরুন ঠাকুর বলেন,জমিদার বাড়ি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আসে,এই জমিদার বাড়ীতে অনেক নায়ক - নায়িকায় অভিনয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অসংখ্য ছবি ও নাটক তৈরি করা হয়েছে। বাড়ীটির সংস্কারের অভাবে দিন দিন এই জমিদার বাড়িটি বিনষ্ট হচ্ছে। সরকারি অর্থে এই বাড়ীটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে ঐতিহাসিক কারুকার্যময় এই বাড়িটি যেমন রক্ষা পাবে ঠিক তেমনি এই বাড়িটি দেখার জন্য দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকদের আগমন বাড়বে।