ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রামে মুগ্ধ পর্যটক

পাহাড় নদী লেক সাগরের অপার সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ২২:২৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পাহাড় নদী লেক সাগরের অপার সৌন্দর্য

মাকসুদ আহমদ ॥ পর্যটনের ষোলআনা পূর্ণ করতে পর্যটকরা ছোটে দূর-দূরান্তে। পাহাড় নদী লেক আর সাগরের সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতির অন্যতম নিদর্শন রয়েছে চট্টগ্রামেই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটন স্পটগুলোতে প্রকৃতির অপরূপ সব নিদর্শন খুঁেজ পাওয়া যায় না। কি নেই চট্টগ্রামে-এমন প্রশ্নে পর্যটকরাও চুপসে যান। পর্যটকদের মনের অকপটে জমিয়ে থাকা সুন্দর নিদর্শনগুলোর বর্ণনা দিতে গেলে পাহাড় নদী লেক আর সমুদ্রের শহর চট্টগ্রামের কথাই উঠে আসে সবার আগে। এক কথায় প্রকৃতি তার অর্ঘ্য হিসেবে চট্টগ্রামকে দিয়েছে নান্দনিকতা। আর সবুজ শ্যামল ঘেরা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য। কাজের ফাঁকে যেমন চাকরিজীবীরা পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে যেতে চান ছায়াঘেরা পাহাড়ী বনাঞ্চল আর নদী সমুদ্রের মিলনমেলায়। চট্টগ্রাম শহরেই রয়েছে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত। এরমধ্যে পতেঙ্গাই সেরা। পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকত একদিকে পর্যটকদের স্বল্প পরিসরে বালিয়াড়ির মাঝে জোয়ার ভাটা যেমন দেখা যায়, তেমনি কর্ণফুলী নদী আর সমুদ্রের মোহনাও দেখা যায় পতেঙ্গায়। এমন অবস্থান দেশের কোথাও নেই। একই স্পটে দুটি পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম উন্নয়নের প্রথম পরিকল্পনায় থাকা স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়িত হচ্ছে সেই পতেঙ্গাতেই। মীরসরাই হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়কের মাধ্যমে ফৌজদারহাট রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলে প্রবেশ করবে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনমুখী পর্যটকরা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকি বীচের সন্নিকটেই বঙ্গবন্ধু টানেলের বহিরাগমন। চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম পাহাড়ী এলাকা রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটি ঘিরে পর্যটন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যটন মোটেলও করা হয়েছে। সরকারী স্থাপনার ব্যবস্থাপনা নাজুক হলেও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় থাকা হোটেল মোটেল রিসোর্ট আর কটেজ ধুমছে ব্যবসা করে যাচ্ছে। পর্যটকরাও বার বার ঘুরে ফিরে এ স্পটকে কেন্দ্র করে নৌকা বা ইঞ্জিন বোট এমনকি লঞ্চে চড়ে রাঙ্গামাটি লেকের দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছে। পর্যটকদের অনেকেরই অদেখা জায়গা মাইনি, মারিস্যা, লংগদু, কাট্টলী বাজারসহ বিভিন্ন স্পট। বেশিরভাগ পর্যটকই সুভলং পর্যন্ত গিয়ে ফেরত আসেন ঝুলন্ত সেতুতে। লেকের ওপারে থাকা প্যাদা টিং টিং রেস্টুরেন্টে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ সেরে বিকেলেই ফেরত যান গন্তব্যে। অজানা থেকে যায় রাঙ্গামাটি লেকের সেই সংযোগ পথটি, যা রাঙ্গামাটি লেক ও কাপ্তাই লেককে সংযুক্ত করেছে। এ সংযোগ পথটি দেখার সুযোগ রয়েছে মূলত কাপ্তাই থেকে। কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত ইঞ্জিন বোটে সংযোগ পথ অতিক্রম করে চলে যাওয়া যায়, যা অনেকেরই অজানা। মাত্র আড়াই হাজার টাকা ভাড়ায় ১শ’ জন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন এসব ইঞ্জিন বোট পর্যটকদের ছাড়াও রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ের মধ্যে যারা ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকরি বাকরি করেন তাদেরকেও আনা নেয়া করে থাকে এসব ইঞ্জিন বোট। চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে আট থেকে নয় হাজার টাকা ভাড়ায় দ্বিতীয় ইঞ্জিন বোট নিয়ে কাপ্তাই যেতে পারেন পর্যটকরা। কর্ণফুলী নদী হয়ে রাঙ্গুনিয়া দিয়ে কাপ্তাই লেকের দিকে চলে যায় ইঞ্জিন বোট। পথে পাওয়া যায় কোদালা টি গার্ডেন। সুবিশাল এ টি গার্ডেনেও ঘুরে ফিরে দেখার অনেক কিছুই রয়েছে। পাহাড়ী বনাঞ্চলের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা চা বাগান যেন ওই এলাকার মানুষের কর্মস্থল। কোদালা টি গার্ডেন থেকে কিছুক্ষণ সময় পার করে পর্যটকরা কাপ্তাইয়ের উদ্দেশে চলে যেতে পারেন। তবে সদরঘাট থেকে কাপ্তাই হয়ে আবার সদরঘাটে ফিরে আসতে সময় লাগে প্রায় দশ ঘণ্টা। সে জন্য ভোর বেলায় রওয়ানা দিতে হয় যারা ইঞ্জিন বোটে চড়ে কাপ্তাই যাওয়ার টার্গেট করেন। এছাড়াও দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি কাপ্তাইতেই অবস্থিত। কাপ্তাই লেকে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত উন্নয়ন বিভাগ পানি বিদ্যুত উৎপন্ন করে থাকে। দর্শনীয় এ স্থানটি দেখতে হলে সেনাবাহিনী ও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি নিতে হয়। পর্যটকদের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ বাঁধে যেতে দেয়া হয় না। সঙ্গে থাকা মোবাইল ক্যামেরা সবই রেখে যেতে হয় সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে। শুধু তাই নয়, বাঁধের কয়েকটি স্লুইচগেট পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি মেলে পর্যটকদের। সেনাবাহিনী পরিচালিত লেকভিউ আইল্যান্ড নামক পর্যটন স্পটটিও রয়েছে এই কাপ্তাই লেকের বাঁধ থেকে অনতিদূরে। চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান। বান্দরবানকে ঘিরে পাহাড়ী পর্যটন স্পটের অভাব নেই। নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক, পাহাড়ের চূড়ায় বগালেকসহ নানা স্পট ঘিরে বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পর্যটকরা নানা জাতের গাড়ি নিয়ে বান্দরবান শহরে পৌঁছালেও সাহসটুকু কমে যায় তখন যখন সঙ্গে থাকা পরিবহনটি নিয়ে যেতে পারেন না বান্দরবানের বিভিন্ন স্পটে। কারণ, বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়িতেই যেতে হয় নীলগিরি, নীলাচলসহ বিভিন্ন স্পটে। পর্যটকদের সঙ্গে থাকা গাড়িটি শহর অঞ্চলের জন্য অভিজ্ঞ চালক দিয়ে পরিচালিত হলেও পাহাড়ী এ এলাকায় চালকরা সাহস করেন না নিজের গাড়িটি চালাতে। অনায়াসে চাঁদের গাড়িতে চড়ে স্বল্প ভাড়ায় চলে যাওয়া যায় বিভিন্ন স্পটে। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা পথ আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো নবাগতদের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। নীলাকাশ আর সাদা মেঘের ভেলায় মিশে যাওয়া অন্যতম নান্দনিক স্পট নীলগিরি।
×