ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যত্যয় হয়নি নিয়মের

মে মাসে ঠিক ফুটেছে মে ফ্লাওয়ার

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৯ মে ২০২০

মে মাসে ঠিক ফুটেছে মে ফ্লাওয়ার

মোরসালিন মিজান ॥ আর কোন ফুল, আমার মনে হয় না, এত নিয়ম মেনে ফোটে। তবে মে ফ্লাওয়ার ফোটে মে মাসেই। এর কোন ব্যতিক্রম হয় না। বছরের পর বছর ধরে এই এক নিয়মে ফুটছে। এবারও এপ্রিলের শেষদিকে ঢাকার একটি বাড়ির বাগানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফুলটি ফোটেনি। টবের মাটির নিচে পেঁয়াজের গুঁড়ির মতো একটি অংশ শুধু উঁকি দেয়ার চেষ্টা করছে। দেখে মনে হচ্ছিল, এ থেকে গাছ হবে। সেই গাছে ফুল। না, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে এত কিছু সম্ভব হবে না। কিন্তু কী আশ্চর্য, ঠিক ১ মে ফুলটির দেখা মিললো! তখনও ছোট ক্রিকেট বলের মতো দেখতে। নরম সবুজ কান্ডের ঠিক মাথায় হাল্কা লাল রঙের বলটি স্থির হয়ে বসে আছে। ক্রমেই ফুলের সংখ্যা বাড়ল। এখন ওই বাগানের তিনটি টবে সাতটির মতো ফুল। আকারে বড় হয়েছে। সৌন্দর্যটাও উপভোগ করার মতো। ঘ্রাণ নেই। তবে দেখতে এত ব্যতিক্রম যে, মে ফ্লাওয়ারের দিকে চোখ যাবেই। যারা দেখেছেন আগে, তাদের কথা আলাদা। নতুন করে কেউ দেখলে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকতে হবে। বাগানের অন্যান্য ফুলও হয়তো মে মাসের অতিথির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। মে মাসে ফুটে বলেই এর নাম মে ফ্লাওয়ার। গোলাকার দেখতে হওয়ায় ফুলটিকে বল লিলিও বলা হয়। একই কারণে বলা হয় গ্লোব লিলি। পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামেও এটি পরিচিত। তবে মে ফ্লাওয়ার হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এ ফুলের দিকে তাকিয়ে সেই মহা ইতিহাসের কথাই যেন মনে পড়ে যায়। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরে অভূতপূর্ব শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। শ্রমজীবী মানুষেরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে এ প্রতিবাদ গড়ে তুলেন। প্রতিবাদ রুখতে আসা পুলিশ সেখানে গুলিবর্ষণ করলে প্রায় ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় আরও ৬ জনকে। লাল মে ফ্লাওয়ার যেন রক্তাক্ত সেই দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। হয়ত তাই কবিতে হয়: গোলাপ তোমার প্রিয়/আরো প্রিয় মৌ মৌ/গন্ধ-বকুল/জানি, তবু আজ তোমার জন্য/মে ফ্লাওয়ার...। এ ফুলের পাপড়ি অন্যান্য ফুলের মতো হয় না। এমনকি পাপড়ি হয় না বললেও চলে। গড়নের দিক থেকে কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। তবে কদমের চেয়ে আকারে বড়। হাল্কা লাল রংয়ের ফুল। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে গোলাকার ফুলটি কাঁটায় ঘেরা। অনেকগুলো সুচ মুখ বের করে আছে। হাত বাড়ালেই বিপদ! আদতে তা নয়। ফুলের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল একটা অনুভূতি হয়। ফুলটিতে হলুদ রঙের অস্তিত্ব আছে। সেটি চোখে তেমন পড়ে না। তবে হাত দিলে আঙ্গুলে হলুদ রং লেগে যায়। সাদা জামা পরে ফুলের কাছে গেলে হঠাৎই দেখা যাবে, জামায় হলুদের ছিটে ফোঁটা লেগে আছে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা থেকে জানা যায়, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম আবিষ্কৃত আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে হয়। বাংলাদেশেও অনেকদিন ধরে আছে। মে ফ্লাওয়ার গাছ লম্বা ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া হয়। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। মে ফ্লাওয়ার মে মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। একটি গাছে একাধিক ফুল হয়। পরিণত ফুল অক্ষত অবস্থায় ঝরে পড়ে না। আস্তে আস্তে ফুলের বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে থাকে। এক সময় হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অবশ্য ততদিনে একই গাছে নতুন ফুল ফুটতে শুরু করে। এভাবে মে মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই দেখা যায় প্রিয় ফুল। সব ফুল ঝরে পড়ার পর লম্বা সবুজ পাতার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কা- কিছুই থাকে না। ‘দেখা দেবে বলে তুমি হও যে অদর্শন ...।’ আবার মে মাসে দেখা দেবার কথা দিয়ে চোখের আড়ালে চলে যায় গাছ ও ফুল। শূন্য টব দেখে মনেই হয় না, এর মাটির নিচে আবার জাগার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে আছে কোন তাজা প্রাণ!

আরো পড়ুন  

×