
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা। ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমন ধান ও সবজির ক্ষেত। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে পানির সঙ্গে মাছ ভেসে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, মায়ানী, মঘাদিয়া, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, সরকারতালুক, খিলমুরারী ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ও দক্ষিণ ওয়াহেদপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরীপ্রজেক্ট, জোরারগঞ্জ-আবুরহাট, বড়দারোগাহাট-কমরআলী সড়ক।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কল-কারখানার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সোনাপাহাড় এলাকার বিএসআরএম কারখানা, দক্ষিণ ওয়াহেদপুরের প্যারাগন ফিডমিল, ছদরমাদিঘী, মায়ানীর কিছু অংশ ও বড়কমলদহ এলাকায় সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানার কারণে আশপাশের এলাকাগুলোতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ।
মিরসরাই পৌরসভার মধ্যম মঘাদিয়া এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, “টানা দুদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকা সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকাটি ডুবে যায়।”
সৈদালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, “মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠা এবং খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই সৈদালী ডুবে যায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। অনেকের রান্নাঘরে পানি উঠেছে, চুলায় আগুন জ্বলেনি।”
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার সাহাব উদ্দিন বলেন, “পাহাড়ি ঢলে হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়কের ছরার পূর্বপাশ ভেঙে গেছে। বিশেষ করে হামিদ আলী ভূঁইয়া জামে মসজিদ থেকে রেললাইন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মিটার সড়কে ১৫ দিন আগে সংস্কার কাজ হয়েছিল।”
কাটাছরা ইউনিয়নের মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, “ভারী বর্ষণে জনগুরুত্বপূর্ণ জোরারগঞ্জ-আবুরহাট সড়ক ভেঙে খালে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়ছে। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।”
দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন জানান, “টানা বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বো।”
মৎস্যচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, “ইছাখালীতে কয়েকটি মৎস্য প্রকল্প থেকে পানির সঙ্গে মাছ ভেসে গেছে। তবে বৃষ্টি আর না বাড়লে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, “টানা বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন ডুবে গেছে। কিছু সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি।”
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, “মৎস্য প্রকল্পগুলোর পাড় নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি বেরিয়ে যায়। টানা বৃষ্টির কারণে কিছু প্রকল্পে মাছ ভেসে গেছে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।”
সজিব