ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে তাঁর আদর্শের উল্টো কাজ হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৫ আগস্ট ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে তাঁর আদর্শের উল্টো কাজ হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, কারও একক পিতা নন এমন মন্তব্য করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কোন একক দলের নয়, তিনি সবার। এদেশে এখন বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে তার আদর্শের উল্টো কাজ হচ্ছে। তিনি যে আদর্শ আমাদের মাঝে রেখে গেছেন তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু কোনদিনও ভাবতে পারেননি স্বৈরশাসন থাকবে। উনি চেয়েছিলেন, এ দেশে গণতন্ত্র থাকবে- নির্ভেজাল গণতন্ত্র। নামকাওয়াস্তে গণতন্ত্র নয়। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস নিয়ে গণফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের অবস্থান তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন দেশের মালিক জনগণ। তাই তিনি সংবিধানে লিখে দিয়েছিলেন দেশের মালিক জনগণ এবং এ দেশের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো দেশে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে উল্টে দেয়া হয়েছে। টাকা-পয়সা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে এখন একটা রায় দিয়ে দেয়া হয়। মানুষ যাকে ভোট দিতে চায় না, সে সামনে এসে বলে, আমি নির্বাচিত, আমরা রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক। ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানকে জনগণের স্বার্থে কাজে না লাগিয়ে যারা বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে উল্টো কাজ করে, বঙ্গবন্ধুর নাম, ছবি দেখিয়ে আখের গোছাচ্ছে, তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ১৬ আনা বিপরীত। তিনি বলেন, জনগণই দেশের মালিক। জাতির পিতা জনগণের এই মালিকানা দিয়ে গেছেন, স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। যারা যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, লুটপাটকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তারা দেশের মালিক না। হতে পারে না। সংবিধান তাদের সমর্থন করে না। ড. কামাল বলেন, গণতন্ত্র মানে সব স্তরে জনগণ ক্ষমতার মালিক। যেখানে যেখানে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু তা দেখি না। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ, মোকাব্বির খান, এ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, মহসিন রশিদ, মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আফসারী প্রমুখ। বাংলাদেশ ‘যত দিন থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধু থাকবে’ উল্লেখ করে সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বাংলাদেশ একটি দেশ হবে যেখানে জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। সেটা সংবিধানে তার স্বাক্ষরিত দলিলের মধ্যে লেখা আছে। অথচ, জনগণকে বাস্তবে অধিকার বা মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের সেই মালিকানা কীভাবে আসবে? যদি নির্বাচন সঠিক, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়, তখন মালিক হিসেবে জনগণ ও আমরা সবাই সেই মালিকানার ভূমিকা পালন করতে পারি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের লড়াই ছিল জনগণকে এ দেশের মালিক হিসেবে দেখা। এ কারণে তাকে জীবনও দিতে হলো। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ভুলে গেলে চলবে না। তার আদর্শ সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সে ঐক্য অপরিহার্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।’ বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন সে বাংলাদেশ আজ নেই মন্তব্য করে গণফোরাম নেতা ও আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, দেশে বৈষম্য এত পরিমাণ বেড়েছে, প্রতিটা মানুষ তাতে আক্রান্ত। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র। এর কোনটাই বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। যারা গলা দাপিয়ে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করব, তাদের বলছি, বঙ্গবন্ধু কী চেয়েছিলেন আর আপনারা কী করছেন তা আত্মবিশ্লেষণ, আত্ম অনুসন্ধান করেন। দেশে গোঁজামিলের রাজনীতি চলছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে, ব্যবসা করা হচ্ছে। কিন্তু, তার নীতি, আদর্শ মানা হচ্ছে না। এই আদর্শহীন, নীতিহীন মানুষেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন এবং করবেন। তাদের দ্বারা কখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হতে পারে না এবং সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। এই গোঁজামিলের রাজনীতি বাদ দিয়ে আদর্শের রাজনীতি করুন। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এ দেশের জনগণের জন্য, সাধারণ মানুষের আর্থিক, সামাজিক উন্নতি এবং স্বার্থরক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। অথচ এত বছর পরও আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। এখনও দেশের মানুষ মনে করে না, শাসকরা দেশের মানুষের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করে।’
×