ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে কম ভ্রমণ করা ১০ দেশ: যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর নিঃসঙ্গতা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৫, ২০ জুন ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে কম ভ্রমণ করা ১০ দেশ: যেখানে প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর নিঃসঙ্গতা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য

বিশ্বের বেশিরভাগ পর্যটক যখন জনপ্রিয় গন্তব্যের দিকে ছুটছে, তখন কিছু দেশ রয়ে গেছে ভ্রমণপিপাসুদের চোখের আড়ালে। অথচ এসব দেশে রয়েছে অনাবিষ্কৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গভীর সংস্কৃতির শিকড় আর নিঃশব্দে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। একটু বাড়তি কষ্ট স্বীকার করলেই মিলতে পারে একেবারে ভিন্নধর্মী, অমূল্য অভিজ্ঞতা। চলুন জেনে নিই বিশ্বের সবচেয়ে কম ঘোরা ১০টি দেশের কথা-

১০. গিনি-বিসাউ
প্রতিবছর গিনি-বিসাউয়ে মাত্র ৫২ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করে। পশ্চিম আফ্রিকার এই উপেক্ষিত দেশটিতে পর্যটন অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি, রাজনৈতিক অস্থিরতাও ছিল দীর্ঘদিন। তবে এখন পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।এ দেশের আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে রয়েছে বিজাগোস দ্বীপপুঞ্জ যেখানে একসঙ্গে দেখা মিলবে ম্যানগ্রোভ বন, জলহস্তী আর বিরল পাখির। রাজধানী বিসাউ-তে রয়েছে ঔপনিবেশিক স্থাপত্য আর স্থানীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া। তবে এই দেশ সেসব অভিযাত্রীদের জন্য, যারা কষ্ট সহ্য করে নতুন কিছু খুঁজে পেতে চান।

৯. কোমোরোস
আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের কাছে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ কোমোরোসে বছরে মাত্র ৪৫ হাজার মানুষ ভ্রমণ করেন। অতীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অবকাঠামোর অভাব পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করলেও বর্তমানে নিরাপত্তা অনেকটাই উন্নত।এখানে পাবেন সুন্দর সৈকত, প্রবাল প্রাচীর আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কার্থালা পর্বত। আফ্রিকান, আরব ও ফরাসি সংস্কৃতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা কোমোরোসের সাংস্কৃতিক রূপ বেশ অনন্য। নিরিবিলি, মূলধারার বাইরে কোনো গন্তব্য খুঁজলে কোমোরোস হতে পারে আপনার পরবর্তী স্টপ।

৮. সাও টোমে ও প্রিন্সিপে
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত দুই দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি প্রতিবছর মাত্র ৩৫ হাজার পর্যটককে স্বাগত জানায়। ইংরেজি কম প্রচলিত হওয়ায় এখানে ভ্রমণ কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অভিজ্ঞতা হবে মনোমুগ্ধকর।এখানে রয়েছে রেইন ফরেস্ট, ঝরনা, কোকো বাগান আর নির্জন সৈকত। প্রিন্সিপে দ্বীপ ইউনেস্কো ঘোষিত জীবমণ্ডল সংরক্ষণ এলাকা, যেখানে রয়েছে অসাধারণ বন্যপ্রাণী। প্রকৃতি আর পাখিপ্রেমীদের জন্য এ এক স্বপ্নের জায়গা।

৭. সলোমন দ্বীপপুঞ্জ
মেলানেশিয়ায় অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জে প্রতি বছর মাত্র ২৯ হাজার মানুষ বেড়াতে যায়। অতীতের রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও এখন পরিবেশ অনেকটাই শান্ত।সলোমন দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গ বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাহাজ ও বিমানের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে পানির নিচে। স্থানীয় সংস্কৃতিও এখানকার বড় সম্পদ। অবকাঠামো বৈচিত্র্যময় হওয়ায় কিছুটা নমনীয় হয়ে চলতে হবে। তবে প্রকৃতি ও ইতিহাস ভালোবাসলে এই গন্তব্য আপনাকে ফিরিয়ে দেবে না।

৬. মন্টসেরাট
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মন্টসেরাটে প্রতিবছর ভ্রমণ করেন মাত্র ২০ হাজারেরও কম মানুষ। ১৯৯০-এর দশকে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে রাজধানী প্লাইমাউথ ধ্বংস হয়ে যায়, যার প্রভাব এখনও টিকে আছে।তবে বর্তমানে মন্টসেরাট নিরাপদ এবং সেখানে আগ্নেয়গিরি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বীপের উত্তরে রয়েছে কালো বালুর সৈকত আর মুগ্ধকর পাহাড়ি পথ। প্রাণবন্ত সংস্কৃতি আর অতিথিপরায়ণ মানুষের উপস্থিতিতে এ যেন ক্যারিবিয়ানের এক গোপন রত্ন।

৫. মাইক্রোনেশিয়া
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মাইক্রোনেশিয়ায় প্রতিবছর মাত্র ১৮ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন। এখানে পৌঁছাতে হয় গুয়াম, হাওয়াই বা ম্যানিলা হয়ে। বিলাসবহুল সুবিধা না থাকলেও প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক ভান্ডার এটি।ডাইভিংপ্রেমীদের জন্য রয়েছে প্রবাল প্রাচীর, গুহা আর যুদ্ধকালীন ধ্বংসাবশেষ। ইয়াপ দ্বীপ বিখ্যাত পাথরের মুদ্রা আর ঐতিহ্যবাহী প্রথার জন্য, পোহেনপেই-এ রয়েছে প্রাচীন শহর নান মাদোল। অনুসন্ধিৎসু ভ্রমণকারীদের জন্য এই গন্তব্য যেন সোনার খনি।

৪. কিরিবাতি
প্রতিবছর মাত্র ১২ হাজার মানুষ কিরিবাতি ভ্রমণ করেন। প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে থাকা এই দ্বীপ দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রসারিত রাষ্ট্রগুলোর একটি, যা ইকুয়েটর ও আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা উভয়েই অতিক্রম করেছে।অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যটন সুবিধা থাকলেও নিরাপত্তা ভালো। পর্যটন নির্ভর না হলেও এখানে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস, অদূষিত সামুদ্রিক জীবন ও সাংস্কৃতিক প্রামাণ্যতা। নির্জনতা আর টেকসই ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য কিরিবাতি হতে পারে চমৎকার পছন্দ।

৩. নিউয়ে
‘পলিনেশিয়ার শিলা’ খ্যাত নিউয়ে বছরে মাত্র ১০ হাজারের একটু বেশি পর্যটককে আকর্ষণ করে। নিউজিল্যান্ডের সহায়তায় এর অবকাঠামো কিছুটা উন্নত, তবে এখানেও পৌঁছাতে হয় অকল্যান্ড থেকে মাত্র একটি সাপ্তাহিক ফ্লাইটে।অপরাধ নেই বললেই চলে, মানুষজন অত্যন্ত বন্ধুবান্ধব। সিজনে গেলে তিমি দেখা, ডাইভিং কিংবা স্নরকেলিংয়ের অভিজ্ঞতা হবে অভাবনীয়। গুহা, প্রবাল প্রাচীর আর পাহাড়ে ঘেরা এই দ্বীপ অফ-গ্রিড ট্রাভেল প্রেমীদের জন্য আদর্শ।

২. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ
মার্শাল আইল্যান্ডে প্রতিবছর মাত্র ৬,১০০ পর্যটক যান। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে অবস্থিত এই দেশটিতে যাওয়া কঠিন, ফ্লাইটও সীমিত এবং ব্যয়বহুল।তবে যারা যান, তারা পাবেন অনন্য ডাইভিং স্পট, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডুবে যাওয়া জাহাজ ও বিমানের ধ্বংসাবশেষ। রাজধানী মাজুরো স্থানীয় সংস্কৃতি জানার জন্য চমৎকার, আর বাইরের দ্বীপগুলো একেবারেই অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্যের গন্তব্য।

১. তুভালু
তুভালু হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম পরিদর্শিত দেশ। প্রতিবছর এখানে যান মাত্র ৩,৭০০ জন পর্যটক। প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে, নয়টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত তুভালুতে পৌঁছাতে হয় শুধু ফিজি থেকে সাপ্তাহিক কিছু ফ্লাইটে।অবকাঠামো সীমিত, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেই, আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকিতেও রয়েছে দেশটি। তবে এখানকার শান্ত, নিরাপদ পরিবেশ আর স্থানীয়দের আতিথেয়তা মুগ্ধ করে। ফুনাফুটি মেরিন কনজারভেশন এরিয়ায় রয়েছে চমৎকার স্নরকেলিংয়ের সুযোগ। যারা প্রকৃতি, ধীর জীবনধারা আর নির্জন সৌন্দর্য ভালোবাসেন, তাদের জন্য তুভালু এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা।


এই কমপরিচিত দেশগুলোতে পর্যটন কম হলেও, সম্ভাবনার অভাব নেই। যাদের ভ্রমণের মানে শুধু ছবি তোলা নয়, বরং একেবারে নতুন কিছু আবিষ্কার, তাদের জন্য এ দেশগুলো হতে পারে জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায়।

 

সূত্র:https://tinyurl.com/a6smjfkd

আফরোজা

×