
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে তথ্যগত ভুল এখন আর চিন্তার কারণ নয়। নাম, পিতার নাম, জন্ম তারিখ বা ঠিকানায় ভুল থাকলে তা অনলাইনের মাধ্যমেই সংশোধন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশনের ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘরে বসেই এই আবেদন করা যায়, সময় লাগে মাত্র ৭ থেকে ১৫ দিন।
আসুন বিস্তারিত জেনে নিই কী কী লাগবে, কীভাবে আবেদন করবেন, কত টাকা ফি দিতে হবে এবং কোন ধাপে কী করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনে যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন
ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য সাধারণত প্রয়োজন হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কপি, সার্ভিস বই, বিয়ের কাবিননামা, পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড বা সন্তানের এনআইডি কপি। সংশোধনের ধরন অনুসারে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ভিন্ন হয়ে থাকে।
নিচে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দেওয়া হলো—
নাম সংশোধনঃ
এসএসসি বা এইচএসসি সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স, সার্ভিস বই, বিবাহের কাবিননামা, সন্তানের এনআইডি কপি।
জন্ম তারিখ সংশোধনঃ
এসএসসি বা সমমানের সনদ, ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স, সার্ভিস বই, কাবিননামা, কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র।
পিতা-মাতার নাম সংশোধনঃ
শিক্ষাগত সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স, পিতা-মাতার এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, ভাই-বোনের এনআইডি কপি।
কত টাকা লাগে সংশোধনে?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি রয়েছে-
শুধুমাত্র এনআইডি তথ্য সংশোধন: ২৩০ টাকা।
অন্যান্য তথ্য সংশোধন: ১১৫ টাকা।
উভয় তথ্য সংশোধন: ৩৪৫ টাকা।
রিইস্যু (সাধারণ): ৩৪৫ টাকা।
রিইস্যু (জরুরি): ৫৭৫ টাকা।
বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে এই ফি অনায়াসে পরিশোধ করা যায়।
অনলাইনে এনআইডি সংশোধনের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
ধাপ ১ – প্রয়োজনীয় কাগজ স্ক্যান করুন
ছবি তুলে বা স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র প্রস্তুত রাখুন।
ধাপ ২ – এনআইডি ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করুন
services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ ও ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
ধাপ ৩ – প্রোফাইল থেকে তথ্য সংশোধন করুন
লগইন করে প্রোফাইল এডিট করে সংশোধনযোগ্য তথ্য সঠিকভাবে টাইপ করুন। পূর্বের ও সংশোধিত তথ্য যাচাই করে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ – ফি প্রদান করুন
বিকাশ অ্যাপ থেকে ‘পে বিল’ অপশনে গিয়ে ‘সরকারি ফি’, ‘NID Service’ নির্বাচন করে ফি প্রদান করুন।
ধাপ ৫ – প্রমাণপত্র আপলোড ও আবেদন সাবমিট
সংশোধনের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদন সাবমিট করুন।
ধাপ ৬ – আবেদন ফরম ডাউনলোড
আবেদন সাবমিটের পর ড্যাশবোর্ড থেকে ফরম ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
জন্মতারিখ ও নাম সংশোধনের বিশেষ নিয়ম
জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনে এসএসসি সনদ ও ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। শিক্ষাগত সনদ না থাকলে বিকল্প হিসেবে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সার্ভিস বই অথবা বিবাহের কাবিননামা দেওয়া যেতে পারে।
নাম সংশোধনের ক্ষেত্রেও একই রকম নথিপত্র প্রয়োজন হয়। যেকোনো দুটি সঠিক প্রমাণপত্র জমা দিলে অনুমোদনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা সংশোধন
শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য অনলাইনেই সংশোধন করা যায়। ঠিকানা পুরোপুরি পরিবর্তন করতে হলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে ঠিকানা পরিবর্তন ফরম জমা দিতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ডে ভুল থাকলে এখনই সংশোধনের উদ্যোগ নিন। অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। সঠিক ডকুমেন্ট, নির্ভুল তথ্য ও সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলেই ঝামেলা ছাড়াই মিলবে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র। ভুল থেকে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে আজই আবেদন করুন।
আফরোজা