
ছবিঃ সংগৃহীত
খুলনার মেয়ে তাসমিয়া রশিদ নওরীন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তিনি অংশ নিয়েছেন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মসূচি YESS Girls Movement: ২০২৫-এ। উগান্ডায় অবস্থানরত এই তরুণী বর্তমানে বাংলাদেশ গার্লস গাইডস অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন Volunteer Participant হিসেবে আন্তর্জাতিক এই এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যুক্ত আছেন। সাক্ষাৎকারে তাসমিয়া রশিদ নওরীন তুলে ধরেন তার জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।
জানা যায়, তাসমিয়া রশিদ নওরীন খুলনার আজমখান সরকারি কমার্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মুহাম্মদ আশরাফের নাতনী এবং বিশিষ্ট শিক্ষক প্রফেসর ড. মিয়া আব্দুর রশিদের কন্যা। খুলনার টুটপাড়া এলাকায় তাসমিয়া রশিদ নওরীন বেড়ে উঠেছেন ।
নওরীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় খুলনায়। তিনি যশোর বোর্ডের অধীনে খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে ভর্তি হন যশোর সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে বিএসসি (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (KUET) অধীনে ডিপ্লোমা ইন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, YESS Girl Movement একটি আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, যেখানে এশিয়া ও আফ্রিকার মোট ১১টি দেশের গার্ল গাইডরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। এটি World Association of Girl Guides and Girl Scouts (WAGGGS) এর উদ্যোগে এবং Norwegian Agency for Exchange Cooperation (NOREC) এর অর্থায়নে পরিচালিত একটি আদান-প্রদানমূলক কর্মসূচি। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী রেঞ্জার সদস্যারা অন্যান্য দেশের গার্ল গাইডিং অ্যাসোসিয়েশনে ভ্রমণের সুযোগ পান এবং নিজেদের দেশ ও গাইডিং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে নেতৃত্ব বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন ২০১৮ সাল থেকে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে আসছে। এ পর্যন্ত মোট ১১ জন রেঞ্জার সদস্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন থেকে চারজন রেঞ্জার সদস্য আফ্রিকার উগান্ডা, মালাউই, মাদাগাস্কার এবং এশিয়ার নেপাল—এই চারটি দেশে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন খুলনার মেয়ে তাসমিয়া রশিদ নওরীন।
সাক্ষাৎকারে নওরীন বলেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে এসে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। অনেক কিছু শিখতেছি। অনেক অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। আসলে পরিবার আর শিক্ষকরা পাশে না থাকলে এ যাত্রায় সফলতা পেতাম না। আর গার্ল গাইডের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি। মানুষের জন্যও কাজ করতে পারছি। আসলে আমার পরিবার আমাকে আমার কাজে সবসময় সাহস দিয়েছে। এজন্য এতোদূর আসতে পেরেছি। শিক্ষকরাও পাশে ছিলেন। তারা আমাকে দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি ও সেবা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। তাদের ভালোবাসা ছাড়া আমি হয়ত এতদূর আসতে পারতাম না। তারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছেন।
তাছাড়া,YESS Girls Movement 2025 এ অংশ নিয়ে অনেক কিছু শিখতেছি। এই প্রোগ্রামে অনেক দেশের মেয়েরা অংশ নিয়েছেন। তাদের কাছে থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি। তাদের দেশের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আসলে মানুষের সাথে না মিশলে বাস্তবিক অভিজ্ঞতা হয় না।
প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছি। সুন্দরবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছি। ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি সম্পন্ন করে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছি। আর লক্ষ্য বলতে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করবো। তার পরেরটা পরে ভাবা যাবে।
নওরীন আরো বলেন, পড়ালেখার সময়টাতে নিজের লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই জীবনে সফল হওয়া যাবে। লক্ষ্য ছাড়া মানুষ আগাতে পারে না। আর যেকোনো পেশায় কাজ করেও সমাজের প্রতিটি প্রানীর জন্য কাজ করতে পারলে সমাজ বদলে যাবে।
প্রশ্নের উত্তরে নওরীন বলেন, উগান্ডায় এসে স্থানীয় গার্ল গাইডদের সঙ্গে কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগছে। প্রথমে একটু কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে আমি তাদের সাথে মিশে যেতে পেরেছি। সবার কাছে থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি দেখে অনেক কিছুই শিখতেছি। দেশে ফিরে YESS Girls Movement 2025 প্রোগ্রাম শেষ হলে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবো। পাশাপাশি সমাজ এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করবো। আমি চাই তরুনরা দেশের জন্য এবং মানুষের জন্য কাজ করুক। মানুষের সাথে মিশে ভালো কিছু শেখানো গেলে তাই একটা সময় কাজে লাগবে। এজন্য তরুন-তরুনীদের নিয়ে এক সাথে কাজ করতে চাই।
নোভা