ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ মৃতপ্রায়

তানভীরুল আলম তোহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৩০ মে ২০২৫

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ মৃতপ্রায়

পৃথিবীর সব দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। আর একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা সেই জাতির অবদান। রূপ বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। সেকাল থেকেই এ দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক খুব গভীর। ‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা অথবা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে সুন্দর বস্তুকে বোঝায়। এজন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই বলা হয় মৃৎশিল্প । আর যারা এ শিল্পের সাথে জড়িত তাদের বলা হয় কুমার।

প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে উঠেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। যা আজ বিলুপ্তির পথে তাই কুমারপাড়ার লোকজনের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। কাঁচামাটির গন্ধও তেমন পাওয়া যায় না। হাটবাজারেও আর বসেনা মাটির তৈজসপত্রের পসরা। ফলে মৃৎশিল্পের প্রসার ঘটলেও, কিছু কিছু বিশেষ দিন বা কাজেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে বাঙালির ঐতিহ্যমণ্ডিত এই শিল্প। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু জরাজীর্ণ কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ব্যবসায়। কুমাররা অসম্ভব শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো সব কাজ করে থাকেন।

কালের বিবর্তনে, শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্প। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।

শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পকর্ম। এখন বিশেষ বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠিত মেলায় দেখা মিলে মাটির এসব তৈজসপত্র। বিশেষ করে বাংলা সালের বিদায় ও বরণ উৎসবে। মেলায় আগতদের হাতে হাতে স্থান পাবে এসব মাটির জিনিস। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও স্থান করে নেয় এগুলো।

রাজশাহীর ঐতিহ্যগত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এক সময় রাজশাহী শহরে কুমারপাড়ায় তৈরি হতো মাটির শিল্প। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মাটির তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা লোপ পাওয়ায় নগরীর কামারেরা ছেড়েছেন তাদের পূর্ব-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের পেশা।

মৃৎশিল্পী সেহেরাম মুর্মু বলেন, তেমন বেচা-কেনা হয় না আর আগের মতোন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিছুটা বিক্রি হয় এছাড়া হয় না।

মাটির পাত্রের ব্যবহার নিয়ে একজন ক্রেতা বলেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্র আমাদের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। আমরা এখন প্লাস্টিক, মেলামাইনর তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার করি। 

এই শিল্পটিকে বাচিয়ে রাখতে সঠিক নজরদারি দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে এ কুমার সম্প্রদায়দের জন্য কোনো ভাতার ব্যবস্থা করা গেলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মুমু

×