ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

এসিড রিফ্লাক্স ও GERD থেকে জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনই দিতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:১০, ২৩ জুন ২০২৫

এসিড রিফ্লাক্স ও GERD থেকে জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনই দিতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান

ছবি: সংগৃহীত।

আমাদের দেশে গ্যাস্ট্রিক কিংবা বুকজ্বালার সমস্যা যেন রোজকার ঘটনা। কিন্তু এই সমস্যার গভীরে আছে এসিড রিফ্লাক্স ও তার দীর্ঘস্থায়ী রূপ GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ)। চিকিৎসকদের মতে, শুধু ওষুধে নয়, নিয়মিত জীবনযাত্রায় কিছু সহজ পরিবর্তন আনলেই পাওয়া যায় দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।

যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড-প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ সেঠি ও Healthline, Mayo Clinic এবং U.S. NIH-এর তথ্যানুসারে, নিচে ৯টি কার্যকর অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও সহজে পালন করা সম্ভব:

১. বড় খাবারের বদলে অল্প অল্প করে খান

অনেকেই একবারেই অনেক খেয়ে ফেলেন, যার ফলে পেট ভার হয় এবং এসিড ওপরে উঠে আসে। দিনে ৪–৫ বার অল্প অল্প করে খেলে পাকস্থলির চাপ কমে, গ্যাস বা বুকজ্বালার সমস্যাও কমে।

২. কিছু নির্দিষ্ট খাবার এড়িয়ে চলুন

এসব খাবার পাকস্থলির নিচের ভাল্বকে শিথিল করে, ফলে এসিড উপরে উঠে আসে।

যেসব খাবার এড়ানো উচিত: লেবু, কমলালেবুর মতো টক ফল, টমেটো ও অতিরিক্ত ঝাল খাবার, চকোলেট, মিন্ট, চুইংগাম, চা, কফি ও কোমল পানীয়, অতিরিক্ত তেল-মসলা বা ভাজা খাবার।

এর পরিবর্তে মেডিটারেনিয়ান স্টাইল ডায়েট গ্রহণ করুন—যেখানে থাকবে দেশি শাকসবজি, কলা, আপেলের মতো অ-টক ফল, সিদ্ধ মাছ, মুরগি, আটার রুটি ও ভাত

৩. পানি খান, কোমল পানীয় নয়

চা-কফি বা কোমল পানীয় নয়, দিনে পর্যাপ্ত পানি খান। এতে পাকস্থলির এসিড কমে। চাইলে হালকা আদা চা বা ক্যামোমাইল চা পান করতে পারেন—যা হজমে সহায়ক ও শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।

৪. মিন্ট বা পেপারমিন্ট চুইংগাম খাবেন না

অনেকে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে মিন্ট চুইংগাম খান, কিন্তু এটি পাকস্থলির ভাল্বকে দুর্বল করে দেয়। ফলে বুকজ্বালা আরও বেড়ে যায়।

৫. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন

আদা: সামান্য আদা হজমে সহায়ক এবং পাকস্থলির প্রদাহ কমায়।
ক্যামোমাইল চা: হালকা ও আরামদায়ক, ঘুম ও হজম—দুইয়েই উপকার।

৬. খাওয়ার পর শুয়ে পড়বেন না

রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় গেলে এসিড সহজে উপরে উঠে আসে।
যা করবেন: খাবারের পর অন্তত ২ ঘণ্টা শোবেন না, শোবার ঘরের মাথার অংশ একটু উঁচু করে দিন, বাম পাশে কাত হয়ে শোবেন—এই পজিশন রিফ্লাক্স কমায়

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান বর্জন

অতিরিক্ত ওজন মানেই পেটে চাপ বেশি → রিফ্লাক্স বেড়ে যায়

ধূমপান LES দুর্বল করে, এসিড বাড়ায়

শক্ত বেল্ট, টাইট প্যান্ট—এসব বাদ দিন

৮. খাওয়ার পর হালকা হাঁটাহাঁটি করুন

খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিট হাঁটলে হজম সহজ হয়, রিফ্লাক্স কমে। এছাড়া ডিপ ব্রিদিং বা লম্বা নিঃশ্বাস নেওয়ার ব্যায়ামও উপকারী।

৯. জটিল উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যান

যদি নিচের যেকোনো উপসর্গ নিয়মিত হয়, অবহেলা করবেন না: গলা ব্যথা বা কণ্ঠে ঘড়ঘড়, বুক জ্বালা বা ব্যথা, গিলতে কষ্ট হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, পেটে রক্তক্ষরণ বা কালো পায়খানা।

এসব ক্ষেত্রে ওটিসি অ্যান্টাসিড বা প্রেসক্রিপশনের ওষুধ লাগতে পারে। প্রয়োজনে এন্ডোস্কোপি বা pH টেস্ট দরকার হতে পারে।

এসব মেনে চললে প্রতিদিনের বুকজ্বালাও কমবে, হজমও ভালো হবে। তবে উপসর্গ যদি লেগেই থাকে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র: Healthline, Mayo Clinic, U.S. NIH, Dr. Saurabh Sethi
 

সায়মা ইসলাম

×