
বাবা শামীমের সাথে সন্তান জাইফ ও আরিয়ানা
বলা হয়নি, ভালোবাসি বাবা
প্রিয় বাবা,
আমার ঝঞ্ঝাটময় জীবনে সমস্ত সমস্যার একমাত্র নিখুঁত সমাধান তুমি। তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী সাজে, যেখানে আমি মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায়। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে বাবা, তোমার হাতের বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া ছোট্ট শিশুটির কথা? আমিই তোমার ভীষণ আদরের সেই ছোট্ট শিশুটি। তোমার অসীম যত্ন ও ভীষণ আদরে বেড়ে ওঠা, সেই ছোট্ট শিশুটি আজ যৌবন ছুঁয়েছে। তোমার সেই ছোট্ট শিশুটি আজ বুঝতে শিখেছে। তোমার অসীম যত্ন ও ভালোবাসার কাছে আমি বড্ড অসহায়। কখনই বলা হয়নি, ভালোবাসি। তোমার সেই ছোট্ট শিশুটিও তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে বাবা।
জন্মলগ্ন থেকে সুদীর্ঘ ১৮টি বছর ছিল, আমার জীবনের সোনালি সময়। এই সময়গুলোতে আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড তুমিই ছিলে। তোমার হাত ধরে বেড়ে উঠা শৈশব-কৈশোর আমার আমৃত্যু প্রিয় থাকুক। তোমার এও নিশ্চয়ই মনে আছে- তুমি অফিস থেকে ফেরার পথে আমি ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতাম, কবে তুমি বাড়ি ফিরবে! শেষমেশ গোধূলি ফুরানোর আগেই তুমি দেখা দিতে। আর তোমার আগমনে সেই ছোট্ট শিশুটিও ভীষণ প্রফুল্লিত মনে তোমার হাতের আঙুল ছুঁয়েছে। ঘুমোতে গিয়ে বিছানার চাদর নিয়ে ছোটাছুটি করা তোমার সেই ছোট্ট শিশুটি আমি বাবা। তোমাকে ঘোড়া বানিয়ে তোমার পিঠে শৈশব কাটিয়ে দেয়া বালকটি আমিই, তোমার পিঠে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে যাওয়া সেই বালকটি। তোমার অনুপস্থিতিতে তোমাকে বড্ড মিস করি বাবা। উচ্চশিক্ষা অর্জনে আজ দীর্ঘ ৬টি বছর তোমার কাছ থেকে দূরত্ব বেড়েছে। বেড়েছে হাহাকার। দূরত্ব বেড়েছে তোমাকে যখন ইচ্ছে জড়িয়ে ধরার, জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যাওয়ার। বড় হতে গিয়ে যদি বাবার ভালোবাসা ও আদরের দূরত্ব বাড়ে, তাহলে আমি তোমার সেই ছোট্ট বালকটি হতে চাই বাবা।
তোমাকে কখনই ক্লান্ত হতে দেখিনি। সেই ছোট থেকে দেখেছি, সকালে অফিসে গিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আমার সমস্ত আবদার পূরণে ব্যস্ত হয়ে পড়তে। তোমার এই অসীম যত্ন ও অকৃত্রিম ভালোবাসার কাছে আমি রোজ অসহায় হয়ে পড়ছি বাবা। তোমার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে থাকা আমার অসীম ভালোবাসাকে দূরত্ব ঘায়েল করেছে। অথচ তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার তীব্রতা অধিকতর প্রখর হয়েছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর তৃষ্ণা আমার আজন্ম থাকুক।
অতঃপর- তুমি আমার মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে অবিচল পাশে থেকো।
তোমার সেই ছোট্ট শিশু
রাহমান জিকু
যে হাতটি ধরে হাঁটতে শিখেছি
রিফাত রহমান
আমাদের শৈশবের প্রতিটি পদক্ষেপে যে মানুষটি নীরবে পাশে থেকেছেন, আমাদের পড়াশোনা, জীবনের স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দিয়েছেন- তিনি হলেন আমাদের বাবা। ছোটবেলায় আমরা হাঁটতে শিখেছি যার আঙুল ধরে, সেই হাত আজ বার্ধক্যে কাঁপে। সেই কাঁপা হাতের দিকে আমরা কয়জন তাকাই? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবার অবস্থান বড়ই ট্র্যাজিক। তিনি জীবনের সঞ্চয়, শক্তি, এমনকি নিজের স্বপ্ন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের গড়ে তোলেন। অথচ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই মানুষটি হয়ে পড়েন এক অবহেলিত চরিত্র। বৃদ্ধ বয়সে যখন তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি অসহায়, তখন তাঁর পাশে থাকাটাই যেন সন্তানের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বাবারা হাত খরচ দেন, বই কেনেন, কোচিংয়ের ফি দেন, মোবাইল কিনে দেন তারা আমাদের জন্য করে যান নিরবচ্ছিন্ন ত্যাগ। কিন্তু যখন তারা আয় করতে পারেন না, তখন? আমরা নিজেরা মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করি, কিন্তু বাবার পকেটে হাজার টাকা তুলে দিতে আমাদের কৃপণতা হয়। তাঁরা যখন বলেন, ‘ওষুধটা শেষ হয়ে গেছে’। আমরা তখন বলি, ‘এই মাসে টানাটানি চলছে, পরে পাঠাবো।’ অনেকে একবেলা খাবারের খোঁজ পর্যন্ত নেন না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন অনেক বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে ‘দায়মুক্তি’ নেওয়া হয়। যাঁরা আমাদের স্কুলে নিয়ে গেছেন কাঁধে তুলে, তারাই আজ ছেলের ফ্ল্যাটে জায়গা পান না। বাবা কি কেবল দায়িত্ব পালনের একটা যন্ত্র? তাঁরও তো এক সময় প্রয়োজন হয়- এই বয়সে কেউ পাশে থাকুক।
আমাদের সমাজে বাবাদের আবেগ প্রকাশকে দুর্বলতা ভাবা হয়। আমরা বাবাকে চোখের জল ফেলতে দেখিনি এটাই কি প্রমাণ করে যে তিনি কাঁদেন না? আসলে বাবা কাঁদেন, শুধু নীরবে। তাঁর কষ্ট কোনো দিন প্রকাশ পায় না, কারণ তিনি জানেন পরিবারের ছায়া হয়ে থাকতে হয় নিঃশব্দে।
যেসব সন্তানরা সুখ-দু:খ সকল সময়ে বাবা-মা’কে যত্নে রাখেন, তারা হোক সমাজের উদাহরণ, পথ নির্দেশক। বাবা দিবস বছরে একদিন আসে, কিন্তু বাবার ভালোবাসা প্রতিদিনের। তাঁর ভালোবাসা প্রকাশের ভাষা হয়তো নীরব, কিন্তু তাঁর ত্যাগ প্রতিটি সন্তানের জীবনের সাফল্যের মূল ভিত। আসুন, আমরা আমাদের বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াই শুধু দিবসে নয়, প্রতিদিন।
প্যানেল