
ছবি: সংগৃহীত
বর্ষার মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায় এবং প্রায়ই মানুষকে কামড়ায়। আজ আমরা এমন একটি গাছের কথা জানাব, যা প্রাচীনকালে সাপের কামড়ে ব্যবহৃত হতো। এই গাছের পাতা রক্ত থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিতে পারে বিষ। এমনটাই মনে করা হয়।
বর্ষাকালে গ্রাম, মাঠ কিংবা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় সাপের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। হঠাৎ সাপ কামড়ালে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে অনেকে ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ করে থাকেন। এমনই একটি গাছের নাম কাঁকরোল। অনেক এলাকায় এটি কাঁকোড়া বা কন্টোলা নামেও পরিচিত।
দেখতে সাধারণ সবজির মতো হলেও কাঁকরোল গাছের পাতা ও শিকড়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ওষধিগুণ। প্রাচীন যুগে আধুনিক চিকিৎসা না থাকায় বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ের প্রতিকারে এই গাছ ব্যবহার করা হতো। বিশ্বাস করা হয়, সাপ কামড়ালে এই গাছের পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে এবং সামান্য রস পান করলে বিষ ছড়ানো রোধ হয়।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে কাঁকরোলের গুণাগুণ নিয়ে বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। শুধু সাপ নয়, অন্যান্য বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়েও এটি উপকারী। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, এই গাছের পাতা বা শিকড়ের লেপ বিষ নষ্ট করতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই গাছ বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে এমন উপাদান রয়েছে, যা শরীর থেকে বিষের প্রভাব কমিয়ে দেয় এবং তা নিঃসরণে সহায়তা করে। এজন্য একে অনেকেই ‘প্রাকৃতিক অ্যান্টিভেনম’ বলে থাকেন।
প্রাচীন কিছু বৈদ্যের মতে, সঠিকভাবে ব্যবহারে এই গাছ মাত্র ৫ মিনিটেই বিষের প্রভাব কমাতে শুরু করে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটিকে কখনোই হাসপাতালের অ্যান্টিভেনমের বিকল্প ভাবা উচিত নয়। সাপ কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই শ্রেয়। কাঁকরোল কেবল প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে কার্যকর।
যেসব এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি, যেমন। গ্রামাঞ্চল, জঙ্গল ঘেঁষা অঞ্চল বা নদী ও খেত সংলগ্ন এলাকা। সেখানে এই গাছ সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। বিশেষ করে বর্ষাকালে, এই ধরনের প্রাথমিক জ্ঞান জীবন রক্ষা করতে পারে।
সাপ কামড়ালে যদি হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয়, তাহলে তাজা কাঁকরোল পাতার বাটা ক্ষতস্থানে লাগানো যেতে পারে। চাইলে সামান্য রস পান করাও যেতে পারে। তবে এটি শুধু সময় কেনার উপায়, পূর্ণ চিকিৎসা নয়।
অনেক সময় প্রবীণদের পরামর্শে শুধু ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ করা হয়, যা বিপজ্জনক হতে পারে। মনে রাখা জরুরি, সাপের কামড়ে চিকিৎসা সর্বাধিক জরুরি। প্রাকৃতিক প্রতিকার কেবল সাময়িক সহায়তা দিতে পারে। কাঁকরোল গাছের গুণ থাকলেও চূড়ান্ত নির্ভরতা হওয়া উচিত চিকিৎসকের ওপর।
উল্লেখ্য, এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত ওষুধ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি সাধারণ তথ্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরামর্শ নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছু গ্রহণ করা অনুচিত।
শহীদ