
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
তুলসির উপস্থিতি বাংলার প্রায় ঘরে ঘরে। এটি প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপাদান। তবে এর গুণাগুণের সঙ্গে কিছু সতর্কতা বা অপকারিতাও রয়েছে, যা জানাও জরুরি।
তুলসির পরিচিতি :
তুলসির বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum sanctum বা Ocimum tenuiflorum। এটি ল্যামিয়াসি পরিবারভুক্ত একটি সুগন্ধি ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে সাধারণত দুটি প্রজাতি পাওয়া যায়।
শ্রীতুলসি (সবুজ পাতা)
কৃষ্ণতুলসি (বেগুনি পাতা)
তুলসি গাছ সাধারণত ১–২ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। এর পাতা, বীজ এবং ফুল—তিনটি অংশই ওষুধি গুণসম্পন্ন।
তুলসি বীজের উপকারিতা
হজমে সহায়ক।
গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমায়।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে।
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কার্যকর।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
পাতা ও ফুলের উপকারিতা
পাতা:
ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ও জ্বর উপশমে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে।
গলা ব্যথা ও মুখের ঘা সারাতে।
মানসিক চাপ কমায়।
ফুল:
বুকের কফ পরিষ্কার করে।
কাশি উপশমে।
হালকা জ্বর ও পেটের সমস্যায় ব্যবহারযোগ্য।
চা প্রেমিদের জন্য তুলসি চা যেমন স্বাদের, তেমনি রয়েছে অনেক উপকার।
তুলসি চা তৈরির পদ্ধতি
উপকরণ:
৭–৮টি তুলসি পাতা,
১ কাপ পানি,
সামান্য মধু বা লেবু (ঐচ্ছিক)
পদ্ধতি:
১. এক কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে তুলসি পাতা দিন।
২. ঢেকে রাখুন ৫–৭ মিনিট।
৩. ছেঁকে নিন।
৪. ইচ্ছেমতো মধু বা লেবু মিশিয়ে পান করুন।
তুলসি চায়ের উপকারিতা
সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা উপশমে কার্যকর।
হজম শক্তি বাড়ায়।
মানসিক প্রশান্তি দেয়।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
তুলসির সম্ভাব্য অপকারিতা ও সতর্কতা
যদিও তুলসি সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু মানুষের জন্য কিছু সমস্যা হতে পারে:
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য সতর্কতা:
তুলসি জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হয়, তাই গর্ভবতী নারীদের এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
রক্তপাতজনিত সমস্যা:
তুলসি রক্ত পাতলা করতে পারে। যারা রক্তপাতজনিত রোগে ভুগছেন বা অস্ত্রোপচারের আগে/পরে রয়েছেন, তাদের জন্য তুলসি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক কমে যেতে পারে:
ডায়াবেটিস রোগীরা তুলসি নিয়মিত খেলে ওষুধের প্রভাবের সঙ্গে মিলিয়ে রক্তে চিনি অতিমাত্রায় কমে যেতে পারে।
হরমোনের প্রভাব:
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে তুলসি পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এটি শতভাগ প্রমাণিত নয়, তবুও অতিরিক্ত সেবন এড়িয়ে চলা ভালো।
অ্যালার্জি:
কারও কারও ত্বকে বা শ্বাসতন্ত্রে তুলসি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
তুলসি প্রকৃতির এক অনন্য উপহার—যা রোগ প্রতিরোধ, হজম শক্তি, মানসিক প্রশান্তি এবং নানাবিধ চিকিৎসায় দারুণ কার্যকর। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই এর সেবনের আগে ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা বুঝে সচেতনতা জরুরি।
পরিমিত ও নিয়মিত সেবন করলে তুলসি হতে পারে আপনার ঘরোয়া চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য এক অংশ।
নোভা