
ছবি: সংগৃহীত
অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সারাবছর চোখের চারপাশে, বিশেষ করে নিচের অংশে কালচে ছোপ পড়ে থাকে। একে বলা হয় ডার্ক সার্কেল বা চোখের তলায় কালি। শুধু সৌন্দর্যগত সমস্যাই নয়, এটি অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী কারণে চোখের তলায় কালি পড়ে এবং কীভাবে এর প্রতিকার সম্ভব।
১. ঘুমের ঘাটতি
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চোখের নিচে কালচে ছোপ পড়তে বাধ্য। ঘুম শরীরের পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। নিয়মিত ঘুমের অভাব চোখের নিচে ক্লান্তি এবং রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়।
২. লিভার ও হজমের সমস্যা
অনেক সময় চোখের নিচের কালি শুধু রূপগত নয়, বরং এটি লিভার বা পেটের সমস্যার প্রতিফলনও হতে পারে। হজমে গন্ডগোল, দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, বা লিভারের অস্বাভাবিকতা চোখের নিচে কালচে ছায়া ফেলতে পারে। তাই দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. শরীরে পানির ঘাটতি
ডিহাইড্রেশন বা পানির ঘাটতি শরীরের ত্বকে তার প্রভাব ফেলে। চোখের নিচের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল, ফলে পানি কম খেলেই এই অংশে ফোলাভাব এবং কালি দেখা দেয়। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
মানসিক চাপ রক্তচাপ, ঘুম এবং হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে। এই চাপের প্রভাবও পড়ে চোখের নিচে, দেখা দেয় কালো ছোপ। তাই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মেডিটেশন, ব্যায়াম বা প্রয়োজন হলে কাউন্সিলিং নেওয়া উচিত।
৫. অতিরিক্ত ধূমপান
অতিরিক্ত ধূমপান আমাদের ত্বক এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায়, যা চোখের নিচে কালি পড়ার একটি প্রধান কারণ। সুস্থ ত্বকের জন্য এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬. সূর্যের অতিরিক্ত তাপ ও হাইপারপিগমেন্টেশন
গরমের দিনে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন সৃষ্টি করে। এর ফলে ত্বকে ট্যান পড়ে এবং চোখের নিচের অংশে কালো দাগ দেখা দেয়। তাই গরমে বাড়ির বাইরে বের হলে অবশ্যই UV সুরক্ষা দেওয়া সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
৭. চোখে হাত দেওয়া বা ঘষা
চোখে বারবার হাত দেওয়া, রগড়ানো বা চুলকালে চোখের নিচের ত্বকে থাকা ব্লাড ভেসেলগুলিতে চাপ পড়ে, যা ফেটে গিয়ে কালচে ছোপ সৃষ্টি করতে পারে। এই অভ্যাস বন্ধ করা প্রয়োজন।
৮. উপযুক্ত স্কিনকেয়ার না করা
চোখের নিচের অংশে যত্ন না নিলে কালো দাগ স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করুন, যা ভিটামিন K, রেটিনল, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৯. ঠান্ডা সেঁক (Cold Compress)
চোখের তলায় কালি থাকলে প্রতিদিন সকালে বা রাতে বরফের টুকরো একটি পাতলা কাপড়ে জড়িয়ে হালকা ঘষে লাগালে চোখের ফোলাভাব এবং কালচে দাগ অনেকটাই কমে আসে।
চোখের তলায় কালি পড়া নিছকই একটি প্রসাধন সংক্রান্ত সমস্যা নয়; এটি শরীরের ভেতরের বেশ কিছু সংকেত বহন করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ, পানীয় গ্রহণ এবং নিয়মিত যত্ন—সব মিলিয়ে আপনি ফিরে পেতে পারেন উজ্জ্বল, সতেজ চোখ।
Mily