
সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা ও কৌশল রপ্ত করা গেলে যেকোনো সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও মধুর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বৈবাহিক জীবনে অনেক সময় সঙ্গীর কিছু বিরক্তিকর অভ্যাস চোখে পড়ে, যা শুরুতে তেমন গুরুতর মনে না হলেও পরে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।সংবেদনশীল কোনো বিষয় উত্থাপন করতে হলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে, ঠিক কোন আচরণটি বিরক্তির কারণ হচ্ছে এবং কেন অপর ব্যক্তি এটি করছেন। অনেক সময় সরাসরি অভিযোগের পরিবর্তে তাদের অভ্যাসের পেছনের কারণ বোঝার চেষ্টা করাই বেশি কার্যকর হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো ব্যক্তির মুখে দুর্গন্ধ থাকে, তবে হয়তো তিনি দাঁতের ডাক্তার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি অভিযোগ না করে বলা যেতে পারে, "আমি তোমার সঙ্গে ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পারি। চাইলে তোমার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টও করতে পারি।" এতে সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খোঁজা সম্ভব হয়, বরং কেবল লক্ষণ দূর করার চেষ্টাই করা হয় না।
তবে, যেকোনো সমালোচনা করার সময় রূঢ়তার ছাপ না পড়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই পেটাং এমন একটি ধাপে ধাপে কৌশল বর্ণনা করেছেন, যা অন্যের আচরণ পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে এবং নিজস্ব মতামতকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।
অভিযোগের সুর এড়িয়ে চলা
অনেক সময় সঙ্গীর কিছু অভ্যাস যেমন অপরিচ্ছন্ন নখ বা পারিবারিক আলোচনা চলাকালীন সংবেদনশীলতার অভাব, বিরক্তির কারণ হতে পারে। তবে সরাসরি রূঢ় মন্তব্য করলে অপর ব্যক্তি আত্মরক্ষামূলক মনোভাব গ্রহণ করতে পারেন।
যেমন, "তোমার নখগুলো ভয়ানক!" বা "তুমি একদমই সংবেদনশীল নও!" এ ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বরং, ব্যক্তিগত অনুভূতির মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করাই অধিক কার্যকর।
উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে, "তোমার নখ যখন আমার গায়ে লাগে, তখন ব্যথা পাই," বা "তোমার স্বাস্থ্য নিয়ে আমি চিন্তিত," কিংবা "তোমার যত্ন না নেওয়া দেখে দুশ্চিন্তা হয়।"
একটি গবেষণায় Journal of Family Issues দেখিয়েছে যে, দোষারোপ মূলক কথাবার্তা সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করে এবং অবিশ্বাস ও মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করে। তাই, সরাসরি অভিযোগ না করে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করাই শ্রেয়।
সমাধান খোঁজার দিকে মনোযোগ দেওয়া
শুধু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করাই যথেষ্ট নয়, বরং সমাধানের পথ বের করাটাই আসল কাজ। যদি আলোচনাটি শুধুমাত্র অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে চলে, তবে অপর ব্যক্তি নিজেকে কোণঠাসা মনে করতে পারেন। তাই আলোচনাকে সমাধানমুখী করার চেষ্টা করা উচিত।
পেটাং বলেন, "যদি কেউ নিজেই কোনো সমস্যার সমাধান বের করতে পারেন, তবে সেটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।" উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে, "তোমার মুখের দুর্গন্ধ দেখে ভাবছি, হয়তো দাঁতে বা পাকস্থলীতে কোনো সমস্যা হচ্ছে। তুমি কি মনে করো, এর সমাধান কী হতে পারে?"
এছাড়া, সহযোগিতা করার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। যেমন, "আমরা দুজন মিলে কী করতে পারি যাতে সমস্যাটি দূর হয়?" অথবা "আমি যদি তোমাকে কিছুভাবে সাহায্য করি, সেটা কি উপকারী হবে?" এভাবে উপস্থাপন করলে অপর ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে অভিযোগ নয়, বরং সহমর্মিতার মনোভাব থেকেই আলোচনা করা হচ্ছে।
কথোপকথনে প্রতিফলন আনা
যখন কোনো ব্যক্তি নিজের সমস্যার ব্যাখ্যা দেন, তখন তার বক্তব্য সংক্ষেপে পুনরাবৃত্তি করে বোঝানো উচিত যে তা গুরুত্ব সহকারে শোনা হয়েছে। এতে অপর ব্যক্তি অনুভব করেন যে তার কথা গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা হচ্ছে।
পেটাং বলেন, "মানুষ চায় যে তাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হোক।" উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ বলেন যে সকালে তিনি প্রচণ্ড চাপ অনুভব করেন, তবে তার প্রতিক্রিয়ায় বলা যেতে পারে, "তাহলে যদি আমরা একটু আগে উঠে একসঙ্গে কফি খাই, তাহলে হয়তো সকালটা কম চাপযুক্ত হবে?"
একটি গবেষণায় The University of British Columbia দেখিয়েছে, যখন কেউ অনুভব করেন যে তাকে মনোযোগ দিয়ে শোনা হচ্ছে, তখন তিনি সহজেই প্রভাবিত হন। তাই, কথোপকথনের সময় মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং তার প্রতিফলন দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কথার শেষটা ইতিবাচক রাখা
যত সুন্দরভাবেই কিছু বলা হোক না কেন, অনেক সময় অপর ব্যক্তি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এটি স্বাভাবিক, কারণ আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগলে অনেকেই প্রতিরোধমূলক আচরণ করেন।
এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকা দরকার যেন কথাগুলো সমালোচনার মতো না শোনায়। পেটাং বলেন, "সবসময় বোঝাতে হবে যে আলোচনা ভালোবাসা ও যত্নের জায়গা থেকে আসছে, সমালোচনার জন্য নয়।"
যদি কেউ বিরক্ত হন, তবে আলোচনার শেষ দিকে এটাও জানানো দরকার যে, এটি শুধুমাত্র তাদের কল্যাণের জন্য বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বলা যেতে পারে, "তোমাকে আমি যেমন ভালোবাসি, তেমনই ভালোবাসবো। এটা শুধু তোমার জন্য চিন্তিত হয়ে বলেছি।"
এভাবে ধাপে ধাপে কৌশল প্রয়োগ করলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
সূত্র:https://tinyurl.com/mr46e9dc
আফরোজা