ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

পাকিস্তানে ন্যায়ের সংকট , বৈশ্বিক অবহেলায় ক্ষুব্ধ মুসাদ্দিক মালিক

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২৯ জুন ২০২৫

পাকিস্তানে ন্যায়ের সংকট , বৈশ্বিক অবহেলায় ক্ষুব্ধ  মুসাদ্দিক মালিক

পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী দেশটিতে ঘন ঘন বন্যা ও চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগকে ‘বিচারের সঙ্কট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সবুজ তহবিলের ‘পক্ষপাতদুষ্ট বণ্টন’-এর কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকে পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। গত মাসেও ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে কমপক্ষে ৩২ জন মারা গিয়েছিল। চলতি বছর বসন্তকালেই দেশটিতে একাধিক চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা ঘটেছে।

২০২৫ সালের ক্লাইমেট রেট ইনডেক্স রিপোর্টে ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রাখা হয়। ঐ বছর ব্যাপক বন্যায় দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হন ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। প্রাণ হারান ১,৭০০-এর বেশি মানুষ। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার, আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় আরও ১৫.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

গত বছরও ভয়াবহ বন্যা ও তীব্র গরমে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু এক গ্রীষ্মেই গরমে মারা যান প্রায় ৬০০ জন।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মুসাদ্দিক মালিক বলেন, “আমি এটিকে কেবল জলবায়ুর সঙ্কট হিসেবে দেখি না, এটা একটি নৈতিক ও বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের সঙ্কট। আন্তর্জাতিক সবুজ তহবিলের এই একপাক্ষিক বণ্টনকে আমি ‘তহবিল ঘাটতি’ নয় বরং একটি ‘নৈতিক ঘাটতি’ হিসেবে দেখি।”

চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সাবেক প্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশটিকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। অথচ পাকিস্তানের গড় CO₂ নিঃসরণ মাত্র ০.৫ শতাংশ।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী বছর সে প্রতিশ্রুতির বিপরীতে পাকিস্তান পেয়েছে মাত্র ২.৮ বিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) জানিয়েছে, পাকিস্তান একটি নতুন ‘জলবায়ু সহনশীলতা ঋণ কর্মসূচি’র আওতায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার পাবে, যার মেয়াদ ২৮ মাস। তবে মন্ত্রী মালিক জানিয়েছেন, এই তহবিলও দেশটির বাস্তব পরিস্থিতির তুলনায় অপ্রতুল।

তিনি বলেন, “বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ — চীন ও যুক্তরাষ্ট্র — একাই ৪৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। শীর্ষ ১০টি দেশ ৭০ শতাংশের বেশি নিঃসরণ করে। অথচ সেই ১০টি দেশই পায় ৮৫ শতাংশ সবুজ তহবিল, বাকি ১৮০টি দেশ মিলে পায় মাত্র ১০-১৫ শতাংশ। আমরা এই অবিচারের মূল্য দিচ্ছি বন্যা, কৃষি বিপর্যয় ও মানুষের জীবন দিয়ে।”

ইতালির গবেষণা সংস্থা EvK2CNR এবং পাকিস্তানের জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়, পাকিস্তানে ১৩,০০০-এর বেশি হিমবাহ রয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা বন্যা, অবকাঠামো ধ্বংস, জনপদ ধ্বংস, পানির সংকটসহ নানা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “এই হিমবাহ-গলনের ফলে শুধু ভূমি ও মানুষের জীবন নয়, হাজার বছরের সভ্যতাও ধ্বংস হয়ে গেছে (সিন্ধু প্রদেশে)। মসজিদ, মন্দির, স্কুল, হাসপাতাল, পুরনো ভবন, স্মৃতিস্তম্ভ— সবই বানের জলে ভেসে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, পানিবাহিত রোগ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রবেশাধিকারের সংকট, এমনকি শিশু মৃত্যুহারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”

সানজানা

×