ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

তেহরান খুবই সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ২৭ জুন ২০২৫

তেহরান খুবই সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ছবি: সংগৃহীত।

ইরানের রাজধানী তেহরানে হামলা চালানো এক ইসরায়েলি পাইলট বলেছেন, আকাশ থেকে শহরটি এতটাই সুন্দর ও শান্ত দেখাচ্ছিল যে সুযোগ পেলে তিনি একদিন সেখানে যেতে চান। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর রিজার্ভ নেভিগেটর হিসেবে পরিচিত ‘এ’ নামের এই পাইলট জেরুসালেম পোস্ট–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি সম্প্রতি ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের অভিযানে অংশ নেন, যা ইসরায়েল পরিচালনা করে ১৩ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত। ইসরায়েল দাবি করেছে, এই অভিযানে তারা ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংস করেছে। অভিযানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পাইলট বলেন, “এই কয়েক দিন যেন পুরো একটা বছরের মতো কেটেছে—উত্তেজনা, উত্থান-পতন, অনিশ্চয়তা—প্রতিদিনই ছিল রহস্য উপন্যাসের মতো।”

পাইলট ‘এ’ মূলত ইসরায়েলের মধ্যপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ফোর্থ কোয়ার্টার’-এর সঙ্গে যুক্ত। এই আন্দোলনের বাৎসরিক সম্মেলন চলাকালেই হঠাৎ একটি গোপন বার্তা পান তিনি—“ভোরবেলায় স্কোয়াড্রনে রিপোর্ট করো, আগামীকালই হচ্ছে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলা।” তিনি জানান, বহু বছর ধরেই এর প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ছিল, বাস্তবে হয়তো এর প্রয়োজন হবে না।

তবে এমন একটি মিশনে অংশ নেওয়ার আগে কাউকে কিছু জানানো ছিল কঠিন। তিনি বলেন, “চারপাশে পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী—সবাইকে কিছু না বলেই নিজেকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করতে হয়েছে। অথচ জানতাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের ওপরও হামলা হতে পারে। কাউকে সতর্ক করলে মিশন ব্যর্থ হয়ে যেত।”

ভোরে বাসা ছাড়ার আগে সন্তানদের বিদায় চুমু দেন তিনি। স্ত্রী তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন, “যা করতেই হয় করো, আমরা তোমার পাশে আছি।” সেই মুহূর্তটিকে তিনি আখ্যায়িত করেন “শুদ্ধ অক্সিজেন” হিসেবে।

অভিযান শুরু হওয়ার আগে ব্রিফিং ছিল কঠিন ও সুনির্দিষ্ট। পাইলটদের জানিয়ে দেওয়া হয়, শত্রুরা অত্যন্ত দক্ষ, তাদের হাতে আছে নানা আধুনিক অস্ত্র। পুরো মিশনেই ছিল চরম সতর্কতা ও নির্ভুলতা বজায় রাখার আহ্বান। জটিল ফ্লাইট প্ল্যান, মাঝ আকাশে ট্যাংকার থেকে জ্বালানি সংগ্রহ এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ‘অন্তহীন চেকলিস্ট’—সবকিছুই ছিল এই অভিযানের অংশ।

তেহরান শহরের ওপর দিয়ে উড়ার সময় তার চোখে ধরা পড়ে এক শান্ত দৃশ্য। তিনি বলেন, “৩০ হাজার ফুট ওপর থেকে শহরটা খুবই নিরিবিলি ও শান্ত দেখাচ্ছিল। বাইবেলের উল্লেখিত অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে উড়ে গেছি। ইরানের পাহাড়গুলো দারুণ, শহরটাও চারণভূমির মতো—সাধারণ অথচ মন কাড়া। আমি আশা করি, একদিন এই শহরে যেতে পারব।”

অভিযান শেষে ইরানের আকাশসীমা পেরিয়ে আসার পর পাইলটদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের মতো উত্তপ্ত অঞ্চলের ওপর দিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান নিয়ে উড়া সত্যিই পাগলামি। কিন্তু আমাদের পেছনে রয়েছে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ, গোয়েন্দা সংস্থা ও মোসাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তাদের কারণে এই অভিযানের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।”

ইসরায়েলে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তারা অবতরণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, যা শেষ হয় মিনিটের মধ্যেই।
 

সায়মা ইসলাম

×