
ছবি: সংগৃহীত
প্লাস্টিক বর্জ্যকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পরিবেশগত উদ্বেগ। তবে এবার আশার আলো দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা বাতাসে থাকা আর্দ্রতা ব্যবহার করে খুব সহজেই পলিথিলিন টেরেফথালেট (PET) ধরনের প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে সক্ষম।
এই প্রক্রিয়ায় মাত্র চার ঘণ্টায় ৯৪ শতাংশ প্লাস্টিক ভেঙে পরিণত হয় টেরেফথালিক অ্যাসিড (TPA)-এ, যা পলিয়েস্টার তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, এই TPA-কে আরও মূল্যবান উপকরণে পরিণত করাও সম্ভব। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল Green Chemistry-তে।
গবেষণার সহলেখক এবং নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়োসি ক্রাটিশ বলেন, ‘আমরা বাতাসে থাকা স্বাভাবিক আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে এক অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক ভেঙে ফেলেছি। এটি শুধু পুনর্ব্যবহার নয়, বরং আরও উন্নত উপকরণ তৈরির পথও খুলে দিচ্ছে।’
পরিবেশের জন্য বড় সম্ভাবনা
ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থার (EEA) তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর বিশ্বে যত প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে, তা মোট উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি। আর এই উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ এতদিনের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি প্লাস্টিক টিকে আছে দীর্ঘকাল, পরিবেশ ও প্রাণীর জন্য ঝুঁকি হয়ে।
নতুন পদ্ধতিতে PET প্লাস্টিককে গলিয়ে তাতে মোলিবডেনাম ধাতু (এক ধরনের নমনীয় রুপালি ধাতু) ও অ্যাক্টিভেটেড কার্বনের মিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়। এরপর সাধারণ বাতাসে রেখে দেওয়া হয়। এতে প্লাস্টিক ভেঙে তৈরি হয় TPA ও অ্যাসিটালডিহাইড—উভয়ই শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান।
আগের তুলনায় সহজ ও নিরাপদ
সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় ভাঙা হয় শুধুমাত্র পলিয়েস্টার জাতের প্লাস্টিক। তাই প্লাস্টিক আলাদা করে বাছাই করার দরকার পড়ে না। বোতল, রঙিন কাপড়, এমনকি টি-শার্ট থেকেও তৈরি করা সম্ভব নির্দিষ্ট, স্বচ্ছ TPA।
ড. ক্রাটিশ জানান, ‘যখন আমরা অতিরিক্ত পানি দিয়েছিলাম, তখন প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ বাতাসে থাকা স্বাভাবিক আর্দ্রতাই যথেষ্ট।’
বড় পরিসরে ব্যবহার হবে ভবিষ্যতে
গবেষণার প্রধান নাভিন মালিক বলেন, “এই প্রযুক্তি শুধু প্লাস্টিক দূষণ কমাবে না, বরং একটি ‘সার্কুলার ইকোনমি’ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, যেখানে উপকরণ বারবার ব্যবহার হবে। এটি প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি সবুজ ভবিষ্যতের দিকেই অগ্রসর হওয়ার বাস্তব পদক্ষেপ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ আবিষ্কার আমাদের ভবিষ্যতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উৎপাদননীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এখন শুধু অপেক্ষা, কবে এটি বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়ন হয়।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব