ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

‘আমরা ক্লান্ত’, যুদ্ধবিরতির পর ইরানিদের ভেতর ভঙ্গুর মানসিক অবস্থা

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৫ জুন ২০২৫

‘আমরা ক্লান্ত’, যুদ্ধবিরতির পর ইরানিদের ভেতর ভঙ্গুর মানসিক অবস্থা

ছবি: সংগৃহীত।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ১২ দিনের সংঘাত শেষে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর ইরানের জনগণের ভেতর বিরাজ করছে বিভ্রান্তি, আতঙ্ক, ক্ষোভ এবং কিছুটা আশার সঞ্চার।

তেহরান থেকে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরাউস (নাম পরিবর্তিত) বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, পুরো যুদ্ধ ছিল পূর্বনির্ধারিত। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করল, ইরান কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল, একটি মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত করল—এবং উভয়পক্ষই সন্তুষ্ট। কিন্তু ভুগছে শুধু সাধারণ মানুষ।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানানো হয়, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ৬০৬ জন নিহত হয়েছে। তবে স্বাধীন সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি।

তেহরানের আরেক বাসিন্দা মিনু (ছদ্মনাম) বলেন, “যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতির ভয়াবহ বাস্তবতা—সবকিছু একসঙ্গে আমাদের জীবন ধ্বংস করছে। এসবই শাসকগোষ্ঠীর লোভের ফল। আমরা আমাদের জীবন আর অর্থ দিয়ে এর মূল্য দিচ্ছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞাও চাই না, এমনকি যুদ্ধবিরতিও চাই না। আমরা শুধু আমাদের দেশে শান্তিতে বাঁচতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধ বা যুদ্ধবিরতির চেয়েও বেশি ভয় পাই এখন যে অপমানিত ও ক্ষতবিক্ষত শাসকগোষ্ঠী আছে তাদের। তারা যখন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলকে জবাব দিতে পারছে না, তখন নিজেদের জনগণের ওপরই দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেবে। মৃত্যুদণ্ড, নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে।”

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের বিক্ষোভের পর থেকে ইরানে দমননীতি আরও জোরালো হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, কেবল গত বছরই ইরানে ৯০১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আরেক নাগরিক মেহদি বলেন, “যুদ্ধের খরচ সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে। সরকার জনগণের জন্য নয়, বরং সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের দিকে নজর দেবে। তারা শহীদদের লাশ ব্যবহার করে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে জানে।”

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও মঙ্গলবার ইরানের মাজান্দারান প্রদেশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যদিও কোনো পক্ষই দায়িত্ব স্বীকার করেনি।

সারা (ছদ্মনাম) নামে এক নারী বলেন, “আমি যুদ্ধবিরতিতে বিশ্বাস করি না। তাদের আচরণে এমনটা অস্বাভাবিক। মনে হচ্ছে, এটি একটি ফাঁদ। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে এই কৌশল।”

আরেকজন, কিয়ান (ছদ্মনাম), বলেন, “এই যুদ্ধ যুদ্ধবিরতিতে শেষ হবে না। এই যুদ্ধের শেষ হবে এই শাসকগোষ্ঠীর পতনে। আর এই শাসকগোষ্ঠীর আর কোনো সুযোগ নেই।”

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ পরস্পরকে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।

ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে এবং এরপর ইরানের একটি রাডার স্থাপনায় হামলা চালায়। এরপর ইসরায়েল দাবি করে, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর আলোচনার পর তারা পরবর্তী আক্রমণ থেকে বিরত থাকে।

বর্তমানে পরিস্থিতি অস্থির, এবং বিশ্বের নজর এখন আকাশের দিকে—যুদ্ধবিরতির এই ভঙ্গুর অবস্থার পরিণতি কী হয়, সেটিই দেখার বিষয়।

সূত্র: বিবিসি

সায়মা ইসলাম

×