ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ মেয়র হতে যাচ্ছেন যে মুসলিম তরুণ

মো.সোহাগ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৬ জুন ২০২৫

নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ মেয়র হতে যাচ্ছেন যে মুসলিম তরুণ

ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্ক—একসময় যেখানে মুসলিম নেতৃত্ব কল্পনার বাইরেই ছিল, সেখানেই এখন ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন ৩৩ বছর বয়সী এক তরুণ—জোহরান মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মুসলিম তরুণ ডেমোক্রেটদের হয়ে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সবার চেয়ে।

নিউইয়র্কের রাজনীতিতে ডেমোক্রেটদের আধিপত্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু ডেমোক্রেটদের মধ্যেই এমন এক নেতৃত্বের উত্থান, যিনি ইসলাম, গাজা, অভিবাসী অধিকার এবং ঘরহীনদের প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নেন—তা আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে এখনো দুর্লভ। আর সে জায়গা থেকেই উঠে এসেছেন মামদানি।

সাম্প্রতিক প্রাইমারি ভোটে ৯৩% ভোট গণনায় মামদানি পেয়েছেন প্রায় ৪৪% ভোট। তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুওমো পেয়েছেন ৩৬.৪%। ফলে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন পাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যদি মামদানি শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন, তবে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র।

জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ চলে আসেন নিউইয়র্কে। পড়েছেন ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্সে, পরে বোডোইন কলেজে। সেখানে থেকেই শুরু তাঁর সক্রিয়তা—‘Students for Justice in Palestine’ এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি।

জোহরানের মা মীরা নায়ার—বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাবা মাহমুদ মামদানি—বিশিষ্ট পণ্ডিত ও প্রফেসর, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বাবা-মা উভয়েই হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট।

জোহরান নিজেকে শুধু একজন রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন ‘জনগণের বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। ইসলাম ধর্ম তার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, মসজিদে নিয়মিত উপস্থিতি ও প্রার্থনা—এসবই তাকে মার্কিন মুসলিমদের কাছে একজন অনুপ্রেরণার প্রতীক করে তুলেছে।
তার স্ত্রী, একজন সিরিয়ান শিল্পী, বসবাস করেন ব্রুকলিনে।

রাজনীতিতে আসার আগে জোহরান কাজ করেছেন একটি হাউজিং অর্গানাইজেশনে। কুইন্সে গরিব বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ঠেকাতে আইনি সহায়তা দিয়েছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। এখান থেকেই জনগণের সাথে তার সংযোগ গড়ে ওঠে।

নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার পরিকল্পনাও তেমনি স্পষ্ট ও সাহসী—নতুন বাড়ি নির্মাণ, পুলিশি বর্বরতা রোধ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে নিরপেক্ষ ও মানবিক অবস্থান।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও প্রভাবশালী শহর। আর এই শহরের নেতৃত্বে যদি একজন গাজাবান্ধব, মুসলিম তরুণ উঠে আসেন—তবে সেটি শুধু আমেরিকান রাজনীতির জন্যই নয়, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা হবে।

নিউইয়র্ক কি এবার ইতিহাস গড়তে চলেছে?

Mily

×