ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

হার্ভার্ড ভার্সিটির প্রতিবেদন

গাজায় নিখোঁজ পৌনে চার লাখ মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৪, ২৫ জুন ২০২৫

গাজায় নিখোঁজ পৌনে চার লাখ মানুষ

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত প্রিয় সন্তানের লাশ দেখে কাঁদছেন এক মা

১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ট্রাম্পের প্রস্তাবে বিরতি টেনেছে ইসরাইল ও ইরান। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান যুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে এক প্রকার পিছুটান দিয়েছে ইসরাইল। আবার তারা মনোনিবেশ করতে যাচ্ছে গাজার ধ্বংসযজ্ঞে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরের কথাই ধরা যাক।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর পরই তিনি বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য আবার গাজায় ফিরে যাওয়া, যাতে জিম্মিদের উদ্ধারের পাশাপাশি হামাসের শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলা যায়। স্বভাবতই প্রশ্ন আসছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির কী হবে? আবারও কি গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাবে ইসরাইল। গাজাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবে মানচিত্র থেকে?
এসব প্রশ্ন খুব একটা অমূলক নয়। কেননা, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময়েও গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রাখে ইসরাইল, হত্যা করে ৮৭০ ফিলিস্তিনিকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে তিন লাখ ৭৭ হাজার মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। যাদের অর্ধেকই শিশু। দ্য নিউ আরব ও মিডল ইস্ট মনিটরে এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। খবর ওয়েবসাইটের। 
তারা বলছে, প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ইসরাইলি অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব। এটি হার্ভার্ড ডেটাভার্সে চলতি মাসে প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াকভ গার্ব প্রতিবেদনে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও স্থানিক ম্যাপিং ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, গাজায় ইসরাইলি হামলা ও মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার ফলে অঞ্চলটির জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গাজায় সরকারি তথ্যে মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয়েছে এর তুলনায় প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক বেশি হতে পারে।

বর্তমানে সরকারি তথ্যে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার। ইসরাইলি সামরিক অনুমান-ভিত্তিক মানচিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজা সিটিতে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ, মাওয়াসিতে পাঁচ লাখ ও মধ্য গাজায় সাড়ে তিন লাখ—মোট প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ আছেন।
যুদ্ধ শুরুর আগে গাজার জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২২ লাখ ২৭ হাজার। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, অন্তত তিন লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এখন হিসাবের বাইরে।
যদিও কিছু মানুষ বাস্তুচ্যুত বা নিখোঁজ হতে পারেন। কিন্তু এই মাত্রার তথ্যগত ফারাক থেকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন- এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হয়তো মারা গেছেন। এটি বোঝায় যে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা বহুগুণ বেশি হতে পারে। প্রবেশাধিকার, বাধা ও সহায়তা কেন্দ্রের নকশা
প্রতিবেদনটিতে মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে যে, এর কাঠামো মূলত ইসরাইলি সামরিক কৌশল দ্বারা প্রভাবিত, মানবিক চাহিদা অনুযায়ী নয়। অবস্থানগত তথ্য ও স্থানিক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে ইয়াকভ গার্ব দেখিয়েছেন যে, গাজার বেশিরভাগ মানুষ জিএইচএফের সহায়তা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেননি। এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই প্রবেশযোগ্য ছিল না।

এগুলো ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত নেতজারিম করিডর দিয়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানকার অধিবাসীরা ইসরাইলের ঘোষিত ‘বাফার জোন’-এ অবস্থান করায়, বেসামরিক লোকদের সহায়তা পেতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করতে হতো। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্বল অবকাঠামো, মোটরযানের অভাব ও নিরাপদ রাস্তার ঘাটতি এসব সহায়তা কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশাধিকারে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।
প্রতিবেদনের উপসংহার টানা হয়েছে এই বলে যে, এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো সহায়তার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণের যুক্তিকে প্রতিফলিত করে। এগুলোকে ‘মানবিক সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র’ বলা বিভ্রান্তিকর। এগুলো মানবিক নীতিমালার অনুসারী নয় এবং এগুলোর নকশা ও কার্যপ্রণালীর অনেকটাই অন্য উদ্দেশ্যে পরিচালিত, যা ঘোষিত লক্ষ্যকে দুর্বল করে।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, মে মাসের শেষের দিক থেকে সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫০ জন নিহত ও প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের মতে, নিহতদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত জিএইচএফের বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে বা যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন।

×