নীরব ভূমিকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একাই লড়ছে ইরান

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এক অদ্ভুত মোড় নিয়েছে। ইসরাইলের নজিরবিহীন হামলার সামনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কেবল নিন্দা জানিয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার এই সংকটময় মুহূর্তে ইরান এককভাবে মোকাবিলা করছে চরম সংকট।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের শাসন ব্যবস্থা বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইসরাইলের সক্রিয় ভূমিকা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইরানকে যুদ্ধাস্ত্রে সমৃদ্ধ করেছে। এসবের মধ্যেই গত ১৩ জুন ইসরাইল পারমাণবিক ও সামরিক অবকাঠামোতে ব্যাপক হামলা চালায়, যার ফলে বহু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীর প্রাণহানি ঘটে। সাধারণ মানুষও নিরাপদ নেই এই হানায়।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ইরান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য সাহায্য পাচ্ছে না। হামাস, হিজবুল্লাহ ও পুতিদের মতো ইরানের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধে সক্ষম হয়নি। অপরদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান দেশগুলো— সৌদি আরব, বাহরাইন, মরক্কো, ওমান, কাতার ও কুয়েত শুধু বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে, সরাসরি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে, যা যুদ্ধে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বৃহৎ যুদ্ধে তেলের দাম বৃদ্ধি, বাণিজ্য পথের অচলতা ও উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতি আশঙ্কাজনক।

শিয়াপন্থী হওয়ায় ইরানের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পুরনো দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্য ভঙ্গ করেছে, যা ইরানকে আরও কোণঠাসা করেছে। ইসরাইলও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হওয়ায় সুযোগ পেয়ে দাপটের সাথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের প্রধান ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়া যদিও ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা জানায়, তবু তারা এখনো কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। চীন দুই পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, আর রাশিয়া মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করলেও সরাসরি কোনও সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না। গত বছর ইসরাইল যখন ইরানের জন্য রাশিয়ার সরবরাহ করা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল, তখন মস্কো কোনো সাহায্য দিতে পারেনি।

ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় এই মুহূর্তে ইরান একাকী লড়াই করছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, আর মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো নীরব ভূমিকা নিয়েই ক্ষান্ত।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/CCQJtx2VVDQ?si=e2Cb_vaPo23OoG04