ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের গোপন পরমাণু ঘাঁটিতে হামলার জন্য আমেরিকার ১৪ হাজার কেজির যে বোমা চাইল ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:৪০, ১৭ জুন ২০২৫

ইরানের গোপন পরমাণু ঘাঁটিতে হামলার জন্য আমেরিকার ১৪ হাজার কেজির যে বোমা চাইল ইসরায়েল

ছবি:সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এখন যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল চাইছে আমেরিকার তৈরি এক বিশেষ ধরণের বোমা—যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বাংকার বাস্টার বোমা নামে পরিচিত।

এই বোমার নাম Massive Ordnance Penetrator (MOP)। এর ওজন প্রায় ১৪ হাজার কেজি—মানে একটা বাসের থেকেও অনেক ভারী! ইসরায়েল বলছে, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কিছু এত গভীর আর সুরক্ষিতভাবে পাহাড়ের নিচে বানানো যে সাধারণ বোমায় কিছুই হচ্ছে না।

ইরানের ‘ফোর্ডো’ ঘাঁটি – এক দুর্ভেদ্য দুর্গ
ইরানের যে পরমাণু ঘাঁটির কথা সবচেয়ে বেশি আলোচনায়, সেটির নাম Fordow Fuel Enrichment Plant। এটি একটি পাহাড়ের নিচে গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা, যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বিমান হামলা প্রতিহত করার জন্য। ইসরায়েল ইতিমধ্যে ইরানের কয়েকটি কেন্দ্র টার্গেট করলেও, এই জায়গায় আঘাত হানা এখনো সম্ভব হয়নি।

কী এই ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা?
Massive Ordnance Penetrator (MOP) হলো এমন একটি শক্তিশালী বোমা যা মাটি বা কংক্রিটের নিচে অনেকটা গভীরে ঢুকে তারপর বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ফলে ভিতরের গোপন ঘাঁটিগুলোও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

  • এই বোমার ভিতরে প্রায় ২,৪০০ কেজি বিস্ফোরক থাকে।
  • এটি প্রায় ২০০ ফুট (৬০ মিটার) গভীর পর্যন্ত শক্ত কংক্রিট বা পাহাড় ভেদ করতে পারে।
  • এতে রয়েছে জিপিএস প্রযুক্তি, যা একে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সাহায্য করে।

কে এই বোমা ফেলতে পারে?
এই বোমা এত বড় এবং ভারী যে সাধারণ কোনো যুদ্ধবিমান এটি বহনই করতে পারে না। শুধুমাত্র B-2 Spirit স্টেলথ বোমার এই ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিটি B-2 বিমান দুইটি MOP বহন করতে পারে। ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের B-21 Raider বিমানেও এটি ব্যবহার করা হবে।

ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন
এই বোমার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের দিকে, কিন্তু নানা জটিলতায় তা থেমে যায়। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে দেখা যায়, পুরোনো বোমাগুলো গোপন বাংকার ধ্বংসে কার্যকর নয়। এরপর এই ‘বাংকার বাস্টার’ প্রকল্প আবার চালু হয়। ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে সফলভাবে এটি তৈরি করা হয় এবং ২০১২ সালেই মার্কিন বিমানবাহিনীর হাতে আসে।

ইসরায়েল কি এই বোমা পাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ নয়। কারণ MOP এখন পর্যন্ত শুধু মার্কিন সেনাবাহিনী-এর হাতে আছে। এটি অন্য কোনো দেশে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমেরিকাকেই নিতে হবে। আর এমন একটি সিদ্ধান্ত শুধু সামরিক নয়, বড় কূটনৈতিক বিষয়ও।


ইরান-ইসরায়েল সংঘাত প্রতিদিনই নতুন রূপ নিচ্ছে। যুদ্ধের পথে হাঁটছে দুই দেশ, আর তার মধ্যেই পারমাণবিক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ইসরায়েল চাইছে ভয়ানক এক অস্ত্র—যা এখনো শুধুমাত্র আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে। এই পরিস্থিতি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্ব রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ এনডিটিভি

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×