ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

কোন সিদ্ধান্তে যাবে ট্রাম্প? কূটনীতি না কি পারমাণবিক যুদ্ধ

প্রকাশিত: ২০:২৪, ১৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:২৭, ১৭ জুন ২০২৫

কোন সিদ্ধান্তে যাবে ট্রাম্প? কূটনীতি না কি পারমাণবিক যুদ্ধ

ছবিঃ সংগৃহীত

চারদিন ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ এখন এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিতে হতে পারে একটি সিদ্ধান্ত, যার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়—সারা বিশ্বের উপর পড়বে।

তিনি কি ইসরায়েলকে সহায়তা করবেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে? নাকি আরেকবার চেষ্টা করবেন আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ থামাতে?

একটা বোমা, এক যুদ্ধ, অজস্র জীবন
ইরানের ‘ফোর্দো’ নামের পারমাণবিক কেন্দ্রটি একটি পর্বতের গভীরে অবস্থিত। এটিকে ধ্বংস করতে গেলে লাগবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা—‘GBU-57’, যেটি এতটাই ভারী যে তা বহন করতে পারে শুধু B-2 বোমারু বিমান।

ইসরায়েলের হাতে নেই এই অস্ত্র বা বিমান। তাই, যদি এই হামলা চালানো হয়, সেটা করতে হবে মার্কিন সেনার হাতেই।

এর মানে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে—একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের অংশ হয়ে।

যুদ্ধের ছায়ায় শান্তির চেষ্টা
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েকদিন আগেও কূটনীতির পথে হেঁটেছেন। তাঁর দূত স্টিভ উইটকফ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইরানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, “যদি ট্রাম্প সত্যিই শান্তি চান, তাহলে এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”

কিন্তু সেই আশার মাঝেই ট্রাম্প সোমবার এক সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “তেহরান থেকে সবাইকে সরে পড়া উচিত।” যুদ্ধের হুমকি যেন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

ফোর্দো: ছোট্ট এক জায়গা, বিশাল এক প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না ফোর্দো ধ্বংস হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধরে রাখবে। আর সেটা ঠেকাতে হলে শুধু কথার জোর যথেষ্ট নয়।

“যদি ফোর্দো থাকে, তাহলে যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য অপূর্ণ থাকবে,” বলেন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ব্রেট ম্যাকগার্ক।

যুক্তরাষ্ট্র: এক দেশ, বিভক্ত মত
এই যুদ্ধ কি আমাদের যুদ্ধ? এমন প্রশ্নে বিভক্ত আজ আমেরিকান রাজনীতি।

কেউ বলছেন, ইসরায়েল আমাদের মিত্র, তাদের পাশে থাকা উচিত। আবার অনেকে মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে বারবার শিক্ষা নিয়ে এবার আমরাও দূরে থাকা উচিত।

জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক টাকার কার্লসন বলেন, “ইসরায়েল চাইলে যুদ্ধ করুক, কিন্তু সেটা যেন আমাদের পিঠে চাপিয়ে না দেয়।”

শান্তি না যুদ্ধ: ট্রাম্পের সামনে দোলাচল
ট্রাম্প এখন কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর একটি শেষ চেষ্টা করছেন। তিনি জানেন, এই মুহূর্তে একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানেই হাজারো প্রাণের ঝুঁকি, অজস্র পরিবারের কান্না।

তবে যদি ইরান আলোচনায় না আসে? তাহলে হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে হবে—এই যুদ্ধ কি শুধুই ইসরায়েলের, নাকি আমরাও অংশ হবো?

এই মুহূর্তে সবকিছু যেন দুলছে এক সূক্ষ্ম সুতোর ওপর। শান্তির পথে হাঁটবে বিশ্ব, নাকি আবার শুরু হবে আরেকটি দীর্ঘ, রক্তাক্ত অধ্যায়—সেই উত্তর লুকিয়ে আছে একজন মানুষের সিদ্ধান্তে।

সূত্রঃ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
 

মারিয়া

×