
ছবি: সংগৃহীত
চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ২০ হাজার এন্টি-ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে, এই বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে না পাঠিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়ন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে চরম হতাশায় পড়েছে ইউক্রেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো। প্রশ্ন উঠেছে— কী পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র? আর কী ভাবছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প?
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এবিসি নিউজের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই ২০ হাজার এন্টি-শাহেদ ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার আশায় ছিলেন তিনি। এগুলো ইরানি নকশায় তৈরি শাহেদ ড্রোন প্রতিরোধে ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।
জেলেনস্কি বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো খুব ব্যয়বহুল নয়, তবে এতে এমন কিছু প্রযুক্তি রয়েছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। আমরা এগুলোর ওপর নির্ভর করেছিলাম।”
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানঘনিষ্ঠ হুমকির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেক্সেড সম্প্রতি এক জরুরি নির্দেশে এই ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সময়ে তিনি ইউক্রেন ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রুপের সর্বশেষ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এটাই প্রথমবার কোনো মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রধান ওই বৈঠকে অংশ নেননি।
অন্যদিকে, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত রেখেছে। হেক্সেড ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে সহায়তার আহ্বান জানালেও, সেই সহযোগিতা এখন পর্যন্ত খুবই সীমিত। ফলে ইউক্রেন এককভাবে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে কিয়েভে রেকর্ডসংখ্যক রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ওই রাতে ৪৭৯টি ড্রোন এবং ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রাতের হামলা।
রাশিয়া ইতিমধ্যে নতুন করে ১২ থেকে ১৫টি ড্রোন লঞ্চ সাইট তৈরি করেছে এবং দৈনিক ড্রোন উৎপাদন ক্ষমতা ২১ থেকে বাড়িয়ে ৭০-এ উন্নীত করেছে।
জেলেনস্কি বলেন, “আমরা প্রতিদিনই রুশ হামলার শিকার হচ্ছি। অনেকে ভাবেন যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, কিন্তু বাস্তবে রাশিয়া থেমে নেই। পুতিন শান্তির জন্য নয়, আগ্রাসনের জন্য প্রস্তুত।”
তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি বন্ধ করতে হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বনেতাদেরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই ক্ষমতা আছে।”
এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে সত্যিই কি কৌশলগত চিন্তা, নাকি অন্য কিছু?
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/MmSUplFMaN4?si=gpYbnCkZiM5zKgXM
এম.কে.