ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

থুনবার্গের বিমর্ষ মুখ: কি ঘটেছে তার সাথে ?

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৬, ১০ জুন ২০২৫

থুনবার্গের বিমর্ষ মুখ: কি ঘটেছে তার সাথে ?

পরিবেশবাদী কর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে ইসরায়েল থেকে বিমানে তুলে ফ্রান্সের পথে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে সমুদ্রপথে যাত্রার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁকে এ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয়।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে বিমানের শেষ সারির এক স্থির থাকা আসনে বিমর্ষ মুখে বসে আছেন থুনবার্গ, যে আসনটি এমনকি হেলান দেওয়ার সুযোগও নেই। 

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার এই বিমানে যাত্রায় প্রতি যাত্রীর কার্বন নিঃসরণ হবে প্রায় অর্ধ টন, অথচ গ্রেটা আগে পরিবেশ রক্ষার কারণে বিমানে না চড়ার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি শূন্য নিঃসরণকারী একটি ইয়টে করে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্কে একটি জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেন।

২২ বছর বয়সী এই সুইডিশ কর্মী বর্তমানে প্যারিসগামী একটি বিমানে আছেন এবং সেখান থেকে তিনি নিজ দেশ সুইডেনে ফিরবেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আগে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নির্মম ভিডিও দেখানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি তা দেখতে অস্বীকৃতি জানান।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার ভোরে গ্রেটাসহ ১১ জন কর্মীর বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ নামের নৌযানটি আটক করে। এই দলটি ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর অংশ এবং গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে যাত্রা করেছিল।

গ্রেটা পরে একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, “আমরা আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা অপহরণ হয়েছি।” যদিও পরবর্তীতে ইসরায়েলি সেনারা তাদের পানীয় জল ও স্যান্ডউইচ বিতরণ করার সময় তাঁকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।

বন্দরে আনার পর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার একটি ৪৩ মিনিটের ভিডিও তাদের দেখাতে চায়, যেটি দেহের ক্যামেরা ও ফোন ফুটেজের মাধ্যমে হামলার নৃশংসতা তুলে ধরে। তবে গ্রেটা ও তাঁর সহযাত্রীরা সেটি দেখতে রাজি হননি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “এই নৌযান কর্মীরা সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না। তারা খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে চলেছে।”

এদিকে সোমবার ভোরে নৌযানটি যখন গাজা উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, তখন ইসরায়েলি ড্রোন থেকে একটি সাদা রহস্যময় পদার্থ ফেলা হয়, যার ফলে নৌযান কর্মীদের চোখ জ্বালাপোড়া করতে থাকে। ইসরায়েল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। 

এই ঘটনায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি ঠাট্টার সুরে বলেন, “ইসরায়েলের নিজেরই যথেষ্ট সমস্যা আছে, তারা গ্রেটা থুনবার্গকে অপহরণ করবে কেন?”

গ্রেটার সঙ্গে অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন ইউরোপীয় সংসদের ফরাসি সদস্য রিমা হাসানসহ ব্রাজিল, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন ও তুরস্কের নাগরিকরা।

এই অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মী, যেমন গ্রেটা থুনবার্গ, আরও দুই কর্মী ও এক সাংবাদিক স্বেচ্ছায় বেড়িয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের পক্ষে আইন সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন আদালাহ। সংস্থাটির মুখপাত্র মোআতাসেম জেদান বলেন, “গ্রেটা জানিয়েছেন, আমি যদি এখানে কয়েক সপ্তাহ আটকে থাকি, তার চেয়ে বাইরে থেকে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারি।”

তবে যেসব কর্মী এই প্রস্তাবে রাজি হননি, তাদের আটক রাখা হয়েছে এবং তাদের বিষয়ে শুনানি হবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে।

 

 

সানজানা

আরো পড়ুন  

×