ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ বদলে দেবে বৈশ্বিক শক্তিচিত্র

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৯ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজ বদলে দেবে বৈশ্বিক শক্তিচিত্র

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন-নেভাদা সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ লিথিয়াম খনি আবিষ্কারের ঘটনা বৈদ্যুতিক গাড়ি (EV) ও নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বড়সড় আলোড়ন তুলেছে। এই খনিটির মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ম্যাকডার্মিট ক্যালডেরা: আগ্নেয়গিরির নিচে লুকিয়ে থাকা সোনার খনি

এই লিথিয়াম খনি অবস্থিত ম্যাকডার্মিট ক্যালডেরা নামক একটি প্রাচীন আগ্নেয়গিরির গহ্বরে, যা ওরেগন ও নেভাদা রাজ্যের সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত। গবেষকরা জানান, এখানে ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক টন লিথিয়ামের মজুত থাকতে পারে—যা বিশ্বের বৃহৎ মজুদের অন্যতম।

বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সুযোগ

বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বিশ্বব্যাপী আকাশচুম্বী। অথচ এই সেক্টরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—লিথিয়াম—প্রধানত আমদানি নির্ভর। যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ লিথিয়াম চীন থেকে আমদানি করে, যা একটি কৌশলগত দুর্বলতা।

এই আবিষ্কারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষভাবে লিথিয়াম উত্তোলন করতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজেই একটি শক্তিশালী সরবরাহকারী দেশে পরিণত হতে পারে।

শুধু গাড়ি নয়, জাতীয় বিদ্যুৎ কাঠামোতেও লিথিয়ামের ভূমিকা

লিথিয়াম শুধু EV ব্যাটারির জন্য নয়, বরং গ্রিড-স্কেল এনার্জি স্টোরেজ এবং সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের পরিকল্পনায় এই খনি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

পরিবেশ ও আদিবাসী জনগণের উদ্বেগ

যদিও এটি অর্থনৈতিকভাবে বিপুল সম্ভাবনাময়, তবুও খনি প্রকল্পটি নিয়ে রয়েছে কিছু বিতর্ক। এই অঞ্চলটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র স্থান হওয়ায় তারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

এছাড়া, লিথিয়াম উত্তোলনের ফলে জলস্তর হ্রাস ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও সরকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, তবুও স্থানীয় জনগণের উদ্বেগ এখনও কাটেনি।

ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি: খনিজ স্বাধীনতার পথে যুক্তরাষ্ট্র?

এই খনি আবিষ্কার শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমেরিকার বিদেশ নির্ভরতা কমাতে পারে এবং একটি শক্তিশালী খনিজ উৎপাদনকারী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের সামনে নতুন অবস্থান তৈরি করতে পারে।

তবে এর চূড়ান্ত সফলতা নির্ভর করবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিশ্চিত করার ওপর। যদি যুক্তরাষ্ট্র এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে এই আবিষ্কার আগামী দশকে গ্লোবাল ইভি বাজারে গেমচেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।

আঁখি

×