
ছবি: সংগৃহীত
চীনে এক নতুন সামাজিক প্রবণতা তরুণ প্রজন্মের মাঝে সাড়া ফেলেছে। ব্যস্ত ও স্ট্রেসে ভরা জীবনে আবেগী প্রশান্তির খোঁজে এখন অনেক তরুণী অর্থ দিয়ে কিনছেন মাত্র পাঁচ মিনিটের এক আলিঙ্গন। ‘ম্যান মাম’ নামে পরিচিত পুরুষরা এই সেবা দিয়ে থাকেন। খরচ? মাত্র ২০ থেকে ৫০ ইউয়ান, অর্থাৎ ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা।
এই ম্যান মামরা শরীরচর্চার পেশীবহুল পুরুষ না-ও হতে পারেন। বরং আজকাল তাদের মূল্যায়ন করা হয় স্নেহ, ধৈর্য ও উষ্ণতার মতো মানসিক গুণাবলি দিয়ে। যেসব তরুণীরা পরিবার বা বন্ধুর কাছে নিজের আবেগ শেয়ার করতে পারেন না, তাদের জন্য এই ‘আলিঙ্গন সেবা’ যেন মানসিক অবলম্বনের বিকল্প পথ হয়ে উঠেছে।
প্রচলিত সামাজিক মাধ্যম বা চ্যাট অ্যাপেই এই আলিঙ্গনের সময় ও স্থান নির্ধারিত হয়। সাধারণত জনসমাগমপূর্ণ স্থান—শপিং মল, পার্ক বা সাবওয়ে স্টেশনেই—এই আলিঙ্গন হয়, যাতে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
এই ধরনের লেনদেন একটি পরিষ্কার ও সম্মানজনক বোঝাপড়া নিশ্চিত করে। কেউ কেউ বলছেন, অর্থের বিনিময়ে এই আবেগঘন ছোঁয়া একটি পেশাদার ও সীমাবদ্ধ পরিসরে ঘটে, যা অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার ঝুঁকি কমায়।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন 'ম্যান মাম' জৌ জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে আলিঙ্গন দিয়েছেন এবং আয় করেছেন প্রায় ১৭৫৮ ইউয়ান । অন্য এক ব্যক্তি বলেন, অপরিচিত নারীদের আলিঙ্গন করতে করতে তার আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে।
প্রথমদিকে ‘ম্যান মাম’ শব্দটি ব্যবহৃত হতো শক্তপোক্ত, দেহের দিক থেকে নিরাপদ মনে হয় এমন পুরুষদের জন্য। এখন বিষয়টি মানসিক ও আবেগিক আরামে পরিণত হয়েছে। নারীরা চাচ্ছেন এমন একজন, যার সঙ্গে নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আলিঙ্গনে তারা কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও শান্তি ও স্নেহের ছোঁয়া পান।
একজন ছাত্রী তার থিসিসের চাপে ভেঙে পড়েছিলেন। শিশুকালে আলিঙ্গনে যে নিরাপত্তাবোধ পেতেন, তা ফিরে পেতে একজন দয়ালু ‘ম্যান মাম’-এর সঙ্গে আলিঙ্গনের সিদ্ধান্ত নেন।
আরেকজন তরুণী, ‘ফক্স’, তার প্রিয় ‘ম্যান মাম’-এর জন্য কফি ও একটি বই উপহার এনেছিলেন। আলিঙ্গনের পর দুজন বসে কথা বলেন পরীক্ষা, পঠনপাঠন ও আগ্রহের বিষয় নিয়ে। ফক্স জানান, “আলিঙ্গনের চেয়ে বেশি শান্তি পেয়েছি অপরিচিত একজনের কাছ থেকে পাওয়া সেই আন্তরিক উষ্ণতায়।”
ডিজিটাল যুগে আমরা যতই সংযুক্ত হচ্ছি, ততই যেন আবেগিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এই ধরনের সেবা আজকের দিনে নিঃসঙ্গ মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে একটি নতুন আবেগিক প্রলেপ। এবং হ্যাঁ, এটি প্রেম বা সম্পর্ক নয়—এটি শুধুই সাময়িক আবেগিক প্রশ্রয়।
এই ট্রেন্ড হয়তো অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আমাদের সময়ের একটি গভীর বাস্তবতাকে সামনে এনে দেয়—মানুষ আজ স্পর্শ, সহানুভূতি আর স্নেহের অভাবে জর্জরিত।
মুমু ২