
ছবি: সংগৃহীত
জাতিগত সহিংসতায় বিপর্যস্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর নতুন করে আরও বড় ধরনের দাঙ্গার আশঙ্কায় রয়েছে। হিন্দু মেইতেই ও খ্রিস্টান কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে রাজ্যজুড়ে টানটান পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রোববার রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। কিন্তু তাতেও অস্থিরতা কমেনি। শনিবার চরমপন্থি গোষ্ঠী আরামবাই তেংগোল (এটি)-এর কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তারের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে উগ্রবাদীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
পরে রাজ্যপাল বিজেপি, এনপিপি ও কংগ্রেসের ২৫ জন বিধায়কের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিরা রাজ্যের সংকটাপন্ন পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত সমাধানের দাবি জানান। রাজ্যপাল আশ্বস্ত করেন যে, স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়া ইম্ফাল পূর্ব, ইম্ফাল পশ্চিম, কাকচিং ও থৌবাল জেলায় চার বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশে এসব এলাকায় পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শনিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে এনআইএ ও মণিপুর পুলিশের যৌথ অভিযানে ‘এটি’-র কথিত সেনাপ্রধান কানন মেইতেই-কে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইম্ফাল পশ্চিম জেলার কোয়াকিথেল এলাকায় শত শত মানুষ পুলিশের গাড়িবহর থামিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছোড়ে।
২০২৩ সালের ৩ মে রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর আরামবাই তেংগোল (এটি) গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। সশস্ত্র এই মেইতেই গোষ্ঠী কুকি সম্প্রদায়ের জনগণের ওপর একাধিক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন সময়ে ভারতীয় প্রশাসনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বারবার সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সংলাপ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ। রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা না গেলে, মণিপুরের সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
ফারুক