
ছবি: সংগৃহীত
সনি ওলুমাটি জন্মেছেন ইতালির রাজধানী রোমে, সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও যৌবন। অথচ ৩৯ বছর বয়সী এই নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী ও অধিকারকর্মী আজও ইতালির নাগরিকত্ব পাননি। দীর্ঘদিন বসবাসের পরও তাঁর বৈধতার ভিত্তি কেবল রেসিডেন্স পারমিটের ওপর নির্ভরশীল। সনি বলেন, “আমি এখানে জন্মেছি, এখানেই মরব। তবু রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পাওয়াটা এক নির্মম বঞ্চনা।”
এই বঞ্চনার বাস্তবতা থেকেই ইতালির নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে রোববার ও সোমবার (৮ ও ৯ জুন) জাতীয় গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চেয়েছেন সনি ও তাঁর মতো বহু মানুষ। গণভোটে প্রস্তাবটি পাশ হলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমে ৫ বছর হবে। এছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানরা অভিভাবকের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে।
তবে এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করছেন প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি গণভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন, দাবি করেছেন যে ইতালির বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট মানবিক। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি ভোটারদের অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার একটি কৌশল। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ব্যালট বাক্সের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, কিন্তু কোনো ভোট দেবেন না।
দুঃখজনকভাবে, সনি নিজে এই ভোটে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ, তার নাগরিকত্ব নেই। ২০ বছর আগে নাগরিকত্বের আবেদন করলেও এখনো প্রক্রিয়াধীন। একসময় সরকারি দপ্তর তাঁর আবেদন ফাইলই হারিয়ে ফেলে। “এটা বর্ণবাদ”, বলেন সনি, “সরকারের অনেকেই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করে।”
গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করা প্রায় ১৪ লাখ অভিবাসী নাগরিকত্ব পেতে পারে বলে গবেষণা বলছে। তাঁদের জন্য অপরিবর্তিত থাকবে ভাষাজ্ঞান, ধারাবাহিক বসবাস ও অপরাধমুক্ত থাকার শর্ত।
ইতালির উদার রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো এই পরিবর্তনের পক্ষে। রোমের এক চত্বরে শিক্ষার্থীরা বিশাল অক্ষরে লিখে রেখেছেন—“৮ ও ৯ জুন হ্যাঁ ভোট দিন।” তবে ভোট কার্যকর করতে হলে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটারের অংশগ্রহণ আবশ্যক।
২৮ বছর বয়সী ইনসাফ দিমাসি ইতালির বোলোনিয়ায় পিএইচডি করছেন। তিনি নিজেকে বলেন “নাগরিকত্বহীন ইতালিয়ান”। ৯ মাস বয়সে ইতালিতে এলেও এখনো নাগরিকত্ব পাননি। পড়াশোনার কারণে আয় প্রমাণ করতে না পারায় আবেদন আটকে আছে। তিনি বলেন, “৩৩ বা ৩৪ বছর বয়সে নাগরিকত্ব পেতে পারি, কিন্তু ততদিনে জীবনের অর্ধেক চলে যাবে একজন অদৃশ্য মানুষ হিসেবে।”
ডানপন্থী লীগ পার্টির রবার্তো ভানাচ্চি বলেন, “এই গণভোটের মাধ্যমে আমাদের নাগরিকত্ব বিক্রি করা হচ্ছে, আমাদের পরিচয় মুছে ফেলা হচ্ছে।”
ইতালির এই গণভোটটি কেবল একটি আইন সংস্কারের বিষয় নয়, এটি মানবাধিকার, নাগরিকত্ব ও সমতা নিশ্চিত করার প্রশ্ন। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পেলেও এরা ইতালিরই সন্তান। এখন দেখার বিষয়, দেশের ভোটাররা কি এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেয়?
মুমু ২