ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির ৬টি লক্ষণ ও এক মাসে সমাধানের উপায়

প্রকাশিত: ১২:১২, ৯ জুন ২০২৫

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির ৬টি লক্ষণ ও এক মাসে সমাধানের উপায়

ছবি: সংগৃহীত

ভিটামিন বি১২ হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা শরীরের কোষ ও রক্তকণিকা সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এটি ডিএনএ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেহেতু মানবদেহ নিজে থেকে ভিটামিন বি১২ তৈরি করতে পারে না, তাই এটি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয় বা সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়।

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি প্রায়ই অবহেলিত থেকে যায়, যতক্ষণ না পর্যন্ত এর লক্ষণ প্রকট হয়ে ওঠে। ঘাটতি দীর্ঘস্থায়ী হলে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিচে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির ৬টি সাধারণ লক্ষণ ও তা এক মাসের মধ্যে সমাধানের উপায় তুলে ধরা হলো—

১. স্থায়ী ক্লান্তিভাব

অতিরিক্ত বিশ্রামের পরও যদি আপনি সবসময় ক্লান্ত অনুভব করেন, তা ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। বি১২ রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে, যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হলে দেহ শক্তিহীন হয়ে পড়ে।

২. ফ্যাকাশে বা হলুদাভ ত্বক

বি১২-এর ঘাটতিতে রক্তে স্বাস্থ্যকর লোহিত কণিকার অভাব দেখা দেয়, ফলে ত্বক ফ্যাকাশে বা কখনো কখনো হলুদাভ হয়ে যায়। এতে ‘মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া’ নামক এক ধরনের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, যেখানে লোহিত কণিকা অস্বাভাবিক বড় এবং কার্যক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।

৩. হাত-পায়ে ঝিনঝিন বা অসাড়তা

আপনার হাত বা পায়ে হঠাৎ করে ঝিনঝিনে অনুভূতি বা অসাড়তা দেখা দিলে তা ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির কারণে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বি১২ স্নায়ুর আশেপাশের মাইলিন আবরণ রক্ষা করে, যা না থাকলে স্নায়ুর সংকেত ঠিকভাবে কাজ করে না এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়।

৪. জিভে ব্যথা বা মুখের আলসার

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির আরেকটি লক্ষণ হলো মুখে ব্যথা, জিভে ফোলাভাব বা পোড়া পোড়া অনুভূতি। ‘গ্লোসাইটিস’ নামে পরিচিত এই অবস্থায় জিভ লালচে, ফোলা ও ব্যথাযুক্ত হয়। মাঝে মাঝে মুখে আলসারও দেখা দিতে পারে, যা অনেক সময় প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়।

৫. মনের পরিবর্তন বা হতাশা

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। আপনি যদি হঠাৎ করে উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত বা চঞ্চল হয়ে পড়েন, তবে এটি বি১২ ঘাটতির কারণে হতে পারে। কারণ, এই ভিটামিন সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো মন নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।

৬. স্মৃতিভ্রংশ বা মানসিক বিভ্রান্তি

বি১২-এর ঘাটতিতে ‘ব্রেইন ফগ’ বা চিন্তাশক্তিতে ধীরগতি দেখা দিতে পারে। এতে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, অথবা বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি অনেক সময় ডিমেনশিয়ার মতোও মনে হতে পারে।

এক মাসে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি পূরণের উপায়

✅ প্রথম ধাপ: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করান এবং নিশ্চিত হন আপনার বি১২ ঘাটতি রয়েছে কি না।

✅ খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন:

গরুর কলিজা (৩ আউন্সে ৭০.৭ মাইক্রোগ্রাম)

সালমনের মতো মাছ (৩ আউন্সে ৪.৮ মাইক্রোগ্রাম)

ডিম (প্রতি বড় ডিমে ০.৬ মাইক্রোগ্রাম)

ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল

নিরামিষভোজীদের জন্য: ফোর্টিফায়েড সয়া দুধ বা নিউট্রিশনাল ইয়েস্ট

✅ সাপ্লিমেন্ট বা ইনজেকশন: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ভিটামিন বি১২ সাপ্লিমেন্ট বা ইনজেকশন গ্রহণ করুন।

✅ খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করুন: অ্যালকোহল বা ধূমপান পরিহার করুন, যা ভিটামিন বি১২ শোষণে বাধা দেয়।

✅ উন্নতি লক্ষ্য করুন: শক্তি, মেজাজ বা স্নায়বিক উপসর্গের উন্নতি হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করুন।

✅ নিয়মিত ফলোআপ: ঝুঁকিতে থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।

ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি অবহেলা না করে সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এক মাসের মধ্যেই দেহে এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

আসিফ

×