
ছবি: সংগৃহীত
২০ বা ৩০-এর কোঠার বয়সে হঠাৎ মাথাব্যথা বা ক্লান্তিকে আমরা সাধারণত গুরুত্ব দিই না। কিন্তু গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কে টিউমার বয়সভেদে কাউকে ছাড়ে না। যদিও তরুণদের মধ্যে এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবুও এমন অনেক সময় উপসর্গগুলো অতি সূক্ষ্ম বা বিভ্রান্তিকর হয়, যা অন্য রোগ ভেবে অবহেলা করা হয়।
মস্তিষ্কে টিউমার কী?
মস্তিষ্কে টিউমার হলো অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির একটি অবস্থা। এটি কখনো কখনো ক্ষতিকারক (বিনাইন) হতে পারে, আবার কখনো আক্রমণাত্মক ও ক্যান্সারসৃষ্টিকারী (ম্যালিগন্যান্ট)ও হয়।
গ্রেটার নয়ডার শারদা কেয়ার হেলথসিটির সিনিয়র নিউরোসায়েন্স বিশেষজ্ঞ ডা. রবীন্দ্র শ্রীবাস্তব বলেন,
“তরুণদের মধ্যে টিউমারের উপসর্গ অনেক সময় স্ট্রেস, উদ্বেগ বা মাইগ্রেন ভেবে ভুল করা হয়। এই ভুল নির্ণয় অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। তাই মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করলেই গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।”
তিনি জানান, তরুণদের মধ্যে দেখা দেওয়া মস্তিষ্কে টিউমারের ৭টি প্রাথমিক উপসর্গ:
১. বারবার বা অস্বাভাবিক মাথাব্যথা
যে মাথাব্যথা স্বাভাবিক মনে হয় না, ধীরে ধীরে তীব্র হয়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর — এটি মাথার ভিতরে চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত হতে পারে।
“সাধারণ পেইনকিলারেও কাজ না করলে এটি বিপদের সংকেত,” বলেন ডা. শ্রীবাস্তব।
২. অকারণে বমি বা বমি বমি ভাব
কারণ ছাড়াই বমি বা বমি বমি ভাব? এটা শুধু পেটের সমস্যা না-ও হতে পারে। মস্তিষ্কে চাপ বা তরলের ভারসাম্য বিঘ্ন ঘটলে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে সকালে।
৩. খিঁচুনি বা অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি
আগে কখনো খিঁচুনি হয়নি অথচ হঠাৎ দেখা দিল — এটি গুরুতর লক্ষণ। এমনকি হালকা পেশি ঝাঁকুনি বা কিছুক্ষণের জন্য বিভ্রান্তি— এসবও গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। কারণ টিউমার মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৪. দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণে সমস্যা
হঠাৎ ঝাপসা দেখা, ডাবল দেখা বা কানে সাঁ সাঁ শব্দ শোনা — এগুলো সাধারণ মনে হলেও মস্তিষ্কের সংবেদনশীল অংশে চাপের লক্ষণ হতে পারে।
৫. ভারসাম্য ও সমন্বয়ে সমস্যা
চলতে গিয়ে হঠাৎ দেয়ালে ধাক্কা খাওয়া, জিনিস ফেলে দেওয়া— এসব ক্লান্তি নয়, হতে পারে মস্তিষ্কের ‘সেরেবেলাম’ অংশে টিউমারের কারণে। বারবার ঘটলে গুরুত্ব দিন।
৬. আচরণ বা ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন
কেউ হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করলে, মন-মেজাজ বারবার বদলালে, বা মনোযোগে সমস্যা দেখা দিলে তা হতে পারে মস্তিষ্কের ‘ফ্রন্টাল লোব’-এর প্রভাব। ডা. শ্রীবাস্তব বলেন, “হঠাৎ করে এসব পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”
৭. অসাড়তা বা দুর্বলতা
শরীরের একটি দিক হঠাৎ অসাড় বা দুর্বল হয়ে পড়া, বিশেষ করে হাত বা পা — এটি মোটর নিয়ন্ত্রণে বাধার ইঙ্গিত হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় অনেকেই একে এড়িয়ে যান, যা পরে মারাত্মক রূপ নেয়।
প্রতিরোধে করণীয়:
-
স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাদ্যগ্রহণ
-
নিয়মিত ব্যায়াম
-
প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা
-
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
মস্তিষ্ক আপনার দেহের নিয়ন্ত্রক। তাই যেকোনো অস্বাভাবিকতা সহজে মেনে নেবেন না। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপই পারে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
আবির