ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ৯ জুন ২০২৫

গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি ত্রাণবাহী জাহাজে অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কর্মীসংগঠনগুলো।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) নামের একটি কর্মীসংগঠন জানিয়েছে, ‘ম্যাডলিন’ নামের ওই ইয়টের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টেলিগ্রামে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, লাইফ জ্যাকেট পরা যাত্রীরা হাত উঁচু করে বসে আছেন। তবে স্বাধীনভাবে এই ছবি যাচাই করা যায়নি।

জাহাজটিতে জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা রয়েছেন। এটি মিশরের উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়টটি একটি ‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ প্রবেশের চেষ্টা করায় নৌবাহিনী সেটিকে পথ পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়।

ইসরায়েল বলছে, গাজায় অস্ত্র সরবরাহ ঠেকাতেই তারা সামুদ্রিক অবরোধ আরোপ করেছে এবং এটি হামাসকে প্রতিরোধে তাদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি।

এফএফসি জানায়, ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি শুক্রবার ইতালির সিসিলি থেকে রওনা দেয় এবং এটি ত্রাণ সামগ্রী বহন করছিল। অভিযানের সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় রেখে জাহাজটি প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে তারা জানায়।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ রোববার এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে লেখেন: “আমি আইডিএফ-কে নির্দেশ দিয়েছি যাতে ‘ম্যাডলিন’ ঘৃণার ফ্লোটিলাকে গাজার উপকূলে পৌঁছাতে না দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনে সব ব্যবস্থা নিতে।”

কাটজ বলেন, ২০০৭ সাল থেকে আরোপিত অবরোধের উদ্দেশ্য হলো গাজায় অস্ত্র সরবরাহ ঠেকানো এবং হামাসকে ধ্বংসে এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার অংশ।

তবে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন বলছে, ইসরায়েলের এই সামুদ্রিক অবরোধ অবৈধ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সংস্থাটির প্রেস অফিসার হায় শা উইয়া বলেন,
“আমরা ভীত হব না। বিশ্ব দেখছে। ‘ম্যাডলিন’ একটি অসামরিক, নিরস্ত্র জাহাজ, যা আন্তর্জাতিক পানিসীমায় রয়েছে এবং এতে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা ও প্রতীকী পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে।”

ত্রাণ হিসেবে চাল ও শিশু খাদ্য বহন করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। জাহাজটিতে ব্রাজিল, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন ও তুরস্কের নাগরিকরা রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে গাজামুখী একটি তুর্কি ত্রাণজাহাজ ‘মাভি মারমারা’তে ইসরায়েলি কমান্ডোদের হামলায় ১০ জন নিহত হন।

সম্প্রতি ইসরায়েল তিন মাসের ভূমি অবরোধ শেষে সীমিতভাবে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়, তবে তা বিতরণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation-কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক গত সপ্তাহে বলেন, “ফিলিস্তিনিদের সামনে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি বিকল্প—অনাহারে মারা যাওয়া, কিংবা সামান্য খাবার নিতে গিয়ে নিহত হওয়া।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৪,৮৮০ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×