ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রঙ্গিন স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণীদের, সর্বনাশ করছে চীনা যুবকরা

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১০:৩৪, ২৮ মে ২০২৫

রঙ্গিন স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশি তরুণীদের, সর্বনাশ করছে চীনা যুবকরা

ছবি: সংগৃহীত।

বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণীদের চীনে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। চীনের নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে এই নারীদের চীনে নিয়ে যাওয়া হলেও, বাস্তবে তারা সেখানে মানবপাচারের শিকার হচ্ছেন—এমন ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে মেয়ের তুলনায় ছেলের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৮০-এর দশকে দেশটিতে এক সন্তান নীতির পাশাপাশি নারী ভ্রূণ হত্যার কারণে এই অসমতা তৈরি হয়। গবেষণা বলছে, ২০০০ সালের শুরুর দিকে দেশটিতে প্রতি ১০০ জন মেয়ে শিশুর বিপরীতে জন্ম নিয়েছে ১২১ জন ছেলে শিশু। এর ফলে ২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের প্রায় ৫ কোটি পুরুষ বিয়ে করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পাচারচক্র। তারা বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমারসহ দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণীদের ‘ভালো কাজ’ ও ‘সচ্ছল ভবিষ্যতের’ আশ্বাস দিয়ে চীনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চীনে পৌঁছানোর পরপরই তাদের পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং চলাচলের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। এরপর এসব তরুণীকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয় চীনের গ্রামীণ কৃষক বা শ্রমিকদের সঙ্গে। চীনা পাত্ররা পাচারকারীদের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ‘বউ’ কেনেন।

পাচারের শিকার নারীদের ওপর দ্রুত সন্তান নেওয়ার চাপও প্রয়োগ করা হয়। অনেকেই পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে কঠোর শাস্তি দেয়।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, পূর্বে এই পাচারের শিকার হতেন মূলত মিয়ানমারের নারীরা। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ও নেপালও এই মানবপাচার চক্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দরিদ্র, শিক্ষাবঞ্চিত ও গ্রামীণ নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিঙগাও জানান, চীনের গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিয়ের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, সেখানকার মানুষ ভিনদেশী নারীদের সঙ্গে জোরপূর্বক ও অবৈধ বিয়ে করছে। তিনি বলেন, "এই পরিস্থিতি চীনের অভ্যন্তরীণ সামাজিক ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।"

চীনে নারী স্বল্পতার এমন বাস্তবতায় এখন দেশটির অভ্যন্তরে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর দাবিও উঠেছে, যাতে ‘বিয়ের উপযোগী’ নারীর সংখ্যা বাড়ানো যায়।

সম্প্রতি ২৫ মে বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসও এক সতর্কবার্তায় চীনা নাগরিকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন বাংলাদেশি নারীদের সঙ্গে বিয়ে না করেন। দূতাবাস জানায়, এতে তারা প্রতারণার শিকার হতে পারেন এবং আইনগত জটিলতায় পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

নুসরাত

×