ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আমেরিকান পলিসি 

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী শিক্ষার্থী সংকটে বিপর্যয়ের শঙ্কা!

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:১০, ২৬ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী শিক্ষার্থী সংকটে বিপর্যয়ের শঙ্কা!

ছবিঃ সংগৃহীত

আমেরিকার উচ্চশিক্ষা খাতে এক গুরুতর সংকট ঘনিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছে ‘ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আমেরিকান পলিসি’ (NFAP)। একটি নতুন নীতিপত্রে বলা হয়েছে, দেশটির কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো "ডেমোগ্রাফিক ক্লিফ" বা জনসংখ্যাগত বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে—যার ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেতে পারে।

NFAP-এর গবেষণা ফেলো এবং অর্থনীতির অধ্যাপক ম্যাডেলিন জাভোডনির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালের পর থেকে আমেরিকায় জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে ২০২৫ সাল থেকে কলেজে ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত বয়সী মার্কিন তরুণদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে। ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে এই হ্রাস হতে পারে প্রায় ১৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র আসন পূরণ করেন না, তারা আর্থিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলিকে টিকিয়ে রাখেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মার্কিন অর্থনীতিতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছেন এবং এর মাধ্যমে ৩.৭৮ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে।

রাজ্য তহবিল কমে যাওয়ায় অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ টিউশন ফি-এর ওপর নির্ভর করছে। এটি কেবল তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে না, বরং স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি কম রাখতেও সাহায্য করছে।

প্রতিবেদনটি এই ভ্রান্ত ধারণাও ভেঙে দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আমেরিকান শিক্ষার্থীদের সুযোগ কমিয়ে দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন আন্তর্জাতিক স্নাতক শিক্ষার্থীর কারণে গড়ে দুটি ইন-স্টেট শিক্ষার্থীর ভর্তি সংখ্যা বেড়ে যায়।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব কোম্পানি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড পায়, তার ৭৫ শতাংশের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন সেই অভিবাসীরা যারা মার্কিন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।

NFAP পূর্বাভাস দিয়েছে, যদি অভিবাসী উৎসের শিক্ষার্থীরা না থাকেন, তবে ২০৩৭ সালের মধ্যে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ৫০ লাখ কমে যেতে পারে—মানে বর্তমানের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশে নেমে আসবে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও অন্তত ১১ লাখ হ্রাস ঘটবে, যা বর্তমানে থাকা শিক্ষার্থীর মাত্র ৬০ শতাংশে পৌঁছাবে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে জনসংখ্যা কমছে, সেসব অঞ্চলের অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি হবে ধ্বংসাত্মক।

২০২২ সালে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী শিক্ষার্থীরা স্নাতক পর্যায়ে ছিলেন ১১% এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের শিক্ষার্থী ছিলেন ২৪%। এর ফলে দেশীয় শিক্ষার্থীর ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ হয়েছে।

যদিও ট্রাম্প প্রশাসন ও কোভিড মহামারির সময় আন্তর্জাতিক ছাত্রভর্তি কমে গিয়েছিল, এখন তা কিছুটা ফিরে এলেও ২০১৬-১৭ সালের শীর্ষ অবস্থানের নিচেই রয়ে গেছে।

NFAP বলছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা আরও কমলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব হারাতে পারে, স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে এবং অনেক একাডেমিক প্রোগ্রামও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে, যখন কিছু ইংরেজিভাষী দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করতে চাইছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুযোগ রয়েছে। Optional Practical Training (OPT)-এর মতো কাজের সুযোগের কারণে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আগ্রহী হচ্ছেন, যা STEM খাতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া 

নোভা

×