
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের ১০০তম দিন উপলক্ষে মিশিগানের ওয়ারেন শহরে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, যা ছিল অনেকটা তার প্রচলিত নির্বাচনী প্রচারণার মতোই জাঁকজমকপূর্ণ। সমাবেশে তিনি একদিকে নিজের প্রশাসনের সফলতা তুলে ধরেন, অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
"আমি আপনাদের মিস করেছি" — ফিরে এলো প্রচারণার সুর
ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, “আমি আপনাদের মিস করেছি। আমি প্রচারণাকালীন সময়টা মিস করি।”
তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বাইডেনকে কী নামে ডাকলে ভালো হয়, সে প্রশ্ন করে বলেন, “‘স্লিপি জো’, না কি ‘ক্রুকড জো’?” উপস্থিত জনতা তার প্রশ্নে উল্লাস প্রকাশ করে।
মুক্ত বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন
ট্রাম্প বলেন, “আমি সমস্ত সরকারি সেন্সরশিপ নিষিদ্ধ করেছি এবং আমেরিকায় মুক্ত বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছি।”
তবে, ফাউন্ডেশন ফর ইনডিভিজুয়াল রাইটস অ্যান্ড এক্সপ্রেশন (FIRE)-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকো পেরিনো জানান, “ট্রাম্প প্রশাসন বরং সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় বাকস্বাধীনতার হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে।”
এর মধ্যে সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউস থেকে বহিষ্কার, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমন এবং গাজা ইস্যুতে মতপ্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ঘটনাও রয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য
ট্রাম্প দাবি করেন, “আমরা অবৈধ সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়েছি।”
তবে পরিসংখ্যান বলছে, এই তথ্য খণ্ডিত। সীমান্তে মাসিক অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য ২০০০ সাল থেকে পাওয়া যায়। ২০২০ সালের এপ্রিলেও করোনা পরিস্থিতিতে এর চেয়ে কম সংখ্যক অভিবাসী শনাক্ত হয়েছিল।
অর্থনীতি: ডিম ও গ্যাসের দাম নিয়ে অতিরঞ্জিত দাবি
ট্রাম্প দাবি করেন, “ডিমের দাম ৮৭% কমেছে।” বাস্তবতা হলো, পাইকারি দামে কিছুটা হ্রাস পেলেও খুচরা বাজারে ভোক্তারা এখনো বড় রকমের মূল্যহ্রাস উপভোগ করছেন না।
গ্যাসের দাম নিয়েও তিনি বলেন, “অনেক রাজ্যে গ্যাস এখন ১.৯৮ ডলার প্রতি গ্যালন।” কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, সেই সময় সবচেয়ে কম দাম ছিল ২.৬৬ ডলার, আর জাতীয় গড় ছিল ৩.১৪ ডলার।
অটো শিল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা, বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন
ট্রাম্প অটো শিল্পে নতুন বিনিয়োগের কথা বললেও বেশিরভাগই ছিল পুরনো প্রকল্পের সম্প্রসারণ বা স্থানান্তর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগে এবং অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমনে বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয়ের দাবি
ট্রাম্প বলেন, “আমরা শত শত বিলিয়ন ডলার অপচয় ও জালিয়াতি রোধ করছি।” কিন্তু এ বিষয়ে তার প্রশাসনের প্রদত্ত তথ্য যথাযথ নয়। একটি সরকারি প্রতিবেদন বলছে, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এই পদক্ষেপগুলো বরং সরকারের ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে।
২০১৭ সালের কর সংস্কার ও আগামীর ঝুঁকি
ট্রাম্প বলেন, “ডেমোক্র্যাটরা কর আইন পরিবর্তন করলে ৫৮ শতাংশ কর বাড়বে।”
বাস্তবে, কর বৃদ্ধি হবে কেবল তখনই, যদি কংগ্রেস ২০১৭ সালের কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে ব্যর্থ হয়। তবে ডেমোক্র্যাটরা মধ্যবিত্তদের জন্য করছাড় বজায় রাখার পক্ষে রয়েছে।
কলম্বাস দিবস ও অটোপেন বিতর্ক
ট্রাম্প দাবি করেন, “আমি কলম্বাস দিবস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি।”
প্রকৃতপক্ষে, কলম্বাস দিবস কখনও বাতিল হয়নি এবং এটি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ছুটি।
তিনি আরও বলেন, “বাইডেন অটোপেন দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন।” তবে ইতিহাস বলছে, ট্রাম্পসহ অনেক প্রেসিডেন্টই অটোপেন ব্যবহার করেছেন এবং এটি আইনত বৈধ।
সূত্র: https://www.aljazeera.com/news/2025/4/30/fact-checking-trumps-claims-at-100-day-rally-in-michigan
আবীর